[আসন্ন ইনছন এশিয়ান গেমসে ক্রিকেট ইভেন্টে পুরুষ ও প্রমীলা উভয় বিভাগেই অংশ নেবে স্বাগতিক দক্ষিণ কোরিয়া। ফুটবল, বেসবলের দেশটিতে ক্রিকেট এখনও শৈশব পার করছে। অতি সংক্ষিপ্ত ক্যারিয়ারে কোরিয়ান ক্রিকেটাররা প্রথম কোন বড় টুর্নামেন্টের স্বাদ পাচ্ছেন ঘরের মাঠের এশিয়াড দিয়েই। সেটিকে উপলক্ষ করে একটু জানা যাক কিভাবে তৈরি হচ্ছে কোরিয়ান ক্রিকেটের গল্পটা।]
জুলিয়েন ফাউন্টেন, নামটা কি পরিচিত ঠেকছে? আপনি কোরিয়ান ক্রিকেটের খোঁজখবর নিয়মিত রাখলে অবশ্যই চিনবেন! তবে বাংলাদেশী ক্রিকেট ভক্ত বা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সমঝদার কেউ ইংলিশ ভদ্রলোকের নামটা আরও অনেক আগেই শুনে থাকবেন। ২০১০-১১ সালে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের এই বিশেষজ্ঞ ফিল্ডিং কোচ কাজ করেছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ইংল্যান্ড এবং পাকিস্তান জাতীয় দলেও। তবে এই মুহূর্তে ৪৪ বছর বয়সী পেশাদার ক্রিকেট প্রশিক্ষক ক্যারিয়ারের সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং দায়িত্ব হিসেবে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন ক্রিকেট দুনিয়ার নবীনতম সদস্য দেশসমূহের একটি দক্ষিণ কোরিয়াকে।
ফাউন্টেনের ব্যাপারে চমকে দেয়ার মতো একটা তথ্য হচ্ছে তিনি খেলোয়াড় হিসেবে ক্রিকেট মাঠ ছেড়েছেন বয়েস উনিশ পেরুনোর আগেই! ক্রিকেটের চেয়ে বেসবলটাকেই বেশী চমকপ্রদ মনে হওয়ায় যোগ দেন গ্রেট ব্রিটেন অনূর্ধ্ব-১৯ বেসবল টীমে। ছ’ মাস খেলেই সুযোগ পেয়ে যান জাতীয় দলে। খেলেছেন ব্রিটিশ অলিম্পিক বেসবল টীমে, অ্যামেরিকার জনপ্রিয় মেজর লীগ বেসবলে। তাঁর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পরিচয় তিনিই প্রথম বেসবল খেলে আসা স্বীকৃত ক্রিকেট কোচ। ১৯৯৮ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের স্পেশালিস্ট ফিল্ডিং কোচ হিসেবে শুরু হওয়া যাত্রাটা দেড় দশকেরও বেশী সময়ে সমৃদ্ধ হয়েছে আরও তিনটি প্রতিষ্ঠিত ক্রিকেট দলের সাথে কাজ করে।
তাঁর বর্তমান দায়িত্বের বিষয়ে যাওয়ার পূর্বে একটু আলো ফেলা যাক কোরিয়ার ক্রিকেট অঙ্গনে। আসন্ন এশিয়ান গেমস ক্রিকেটে অংশ নেয়ার আগে দক্ষিণ কোরিয়া একমাত্র আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টটি খেলেছিল ২০১১ সালে, ইস্ট এশিয়া প্যাসিফিক ডিভিশন টু’তে। ছয় জাতির লড়াই কোরিয়া শেষ করেছিল পঞ্চম অবস্থানে থেকে। ২০০১ সালে আইসিসির অ্যাফিলিয়েট সদস্যপদ মিললেও সেটা আজতক সহযোগী স্তরে উন্নীত হয় নি।
সেই দক্ষিণ কোরিয়া যখন গত এপ্রিলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কোচ চেয়ে আইসিসির অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে বিজ্ঞাপন দিল তখন সংগত কারনেই সেটাকে খুব ‘আরাধ্য’ চাকুরী হিসেবে বিবেচনায় নেন নি কোন পেশাদার কোচই। তবে ফাউন্টেনের মনোযোগ আকৃষ্ট হওয়ার কারন ছিল ভিন্ন। তিনি জানতেন দক্ষিণ কোরিয়া দীর্ঘদিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্রের ছোট-বড় বেসবল লীগগুলোতে খেলোয়াড় সরবরাহের অন্যতম উৎস। এমন একটি দেশের ক্রিকেটীয় গোড়াপত্তনে বেসবলের প্রভাব কতোটা পড়ছে সেটা স্বচক্ষে দেখার ইচ্ছেটা তাঁর খুব করেই হচ্ছিল। সুযোগটাও মিলে গেল চমৎকারভাবে। ফাউন্টেন ছুটি কাটাচ্ছিলেন শ্রীলংকায়, এশিয়ান গেমস প্রস্তুতির জন্য কোরিয়া দলও ওই সময়টায় বেছে নিয়েছিল শ্রীলংকাকেই। ব্যাটেবলে হয়ে যাওয়ায় চলে গেলেন একটা ম্যাচ দেখতে।
ভাবী গুরুকে হতাশ করেন নি কোরিয়ান ব্যাটসম্যানরা। বেসবলের ‘হোমার’ কায়দায় তাঁদের একেকটা চার-ছয়ের মার তাঁকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছিল তাঁরই একটা পুরনো তত্ত্ব, ‘টিটোয়েন্টি ক্রিকেটের জন্য বেসবল খেলোয়াড়দের কোন তুলনা হয় না!’
কেমন ছিল সে ম্যাচের অভিজ্ঞতা? “কিছু শট ছিল রীতিমতো ভয়ংকর। একটা ছক্কা সীমানা ছাড়িয়ে অন্তত কুড়ি গজ দূরে পড়লো। মজার বিষয়টা হল তাঁরা সে ম্যাচে অনেকগুলো মৌলিক ক্রিকেটীয় ভুল করেও নির্ধারিত ২০ ওভারে ১৬৫ রান তুলে ফেলেছিল। অথচ ১২০ বলের মধ্যে ৫৯টা বলেই তাঁরা কোন রান নিতে পারে নি!”, বলছিলেন ফাউন্টেন।
খেলা দেখে তাঁর মনে হল ছাত্র হিসেবে ছেলেগুলো খারাপ হবে না! দেরী হয়ে যাওয়ার আগেই দলটার প্রধান প্রশিক্ষক হওয়ার আনুষ্ঠানিকতাটুকু সেরে নিলেন।
[ ২য় পর্বে সমাপ্য ]