Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

নিউইয়র্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র সম্বর্ধনা আয়োজনে পৃথকভাবে মাঠে নেমেছে আওয়ামী লীগের দুটি গ্রুপ। ওদিকে বাংলাদেশ সোসাইটি, নিউইয়র্কও চালাচ্ছে দৌড়ঝাঁপ। তবে প্রধানমন্ত্রীর সংবর্ধনাকে কেন্দ্র করে সবচে প্রকট হয়ে উঠেছে আওয়ামী লীগের অন্তর্কলহ।

এদিকে, সেন্ট্রাল পার্কের গ্লোবাল সিটিজেন ফেস্টিভ্যালের বিশাল অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর যোগ দেওয়ার দিনেই যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের একটি অংশ নাগরিক সংবর্ধনা দেবার ঘোষণা দিয়েছে। এতে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন ও যুক্তরাষ্ট্র-আওয়ামী লীগের মধ্যেও টানাপোড়েনের খবর পাওয়া গেছে। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ ওই কর্মসূচিতে প্রধানমন্ত্রীর অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্তে কিছুটা বিচলিত। কেননা তারা প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত।

chardike-ad

জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখনই নিউইয়র্কে আসেন, প্রতিবারই নাগরিক সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়। একে ‘নাগরিক সংবর্ধনা’ বলা হলেও মূলত এর আয়োজনে থাকে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ।

1410764972_mpঅভ্যন্তরীণ সূত্রগুলো জানাচ্ছে, এবার প্রধানমন্ত্রীর সংবর্ধনা নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতারা একাট্টা হতে পারছেন না। তারা সবাই সংবর্ধনা চাইছেন, কিন্তু নেতৃত্বের দ্বন্দ্বে তারা দুই গ্রুপে ভাগ হয়ে গেছেন। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ এমন একটি আয়োজন করার উদ্যোগ নেওয়ার পর এবার তাতে বাধ সেধেছে নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগ।

তাদের বক্তব্য, নাগরিক সংবর্ধনা বলা হলেও এতে তো নাগরিক সমাজের কারো অংশগ্রহণ থাকে না। নাগরিক সংবর্ধনায় সভাপতিত্বও করেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগেরই সভাপতি। তাই নিউইয়র্ক আওয়ামী লীগ চাইছে সংবর্ধনাটি যাতে করে সত্যিকার অর্থেই একটি নাগরিক সংবর্ধনা হয়ে ওঠে, তা নিশ্চিত করতে একে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের তত্ত্বাবধান থেকে বের করে আনতে হবে।

অন্যদিকে, বাংলাদেশ সোসাইটির কয়েকজন নেতা চাইছেন প্রধানমন্ত্রীকে নাগরিক সংবর্ধনা দেওয়া হোক সোসাইটির পক্ষ থেকে। সোসাইটির প্রস্তাবিত এই আয়োজনের ধারণার প্রতি সমর্থন জানিয়ে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে আওয়ামী লীগ সমর্থিত যুক্তরাষ্ট্র মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল। কাউন্সিল চাইছে সোসাইটির সঙ্গে যৌথভাবে প্রধানমন্ত্রীকে সংবর্ধনা দেবে।

এব্যাপারে বাংলাদেশ সোসাইটির সভাপতি কামাল আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, “আমরা বরাবরই চেয়ে আসছি প্রধানমন্ত্রীকে সংবর্ধনা দিতে। কিন্তু কখনোই আমরা সেই সুযোগ পাইনি।”

নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট জাকারিয়া চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, কয়েক মাস আগে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ আয়োজিত নাগরিক সংবর্ধনা বাতিল করেন প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ। অনুষ্ঠানের মাত্র তিন ঘণ্টা আগে প্রেসিডেন্ট নিউইয়র্কে তার সম্মানে আয়োজিত ‘বিতর্কিত’ সংবর্ধনা বাতিল করেছিলেন। এরপর থেকে আমরা ভেবেছি, প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি সর্বজনীন সংবর্ধনার আয়োজন করবো।

আর সে বিবেচনা থেকেই গত সপ্তাহে নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের সভায় সর্বম্মতিতে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বলে জানান জাকারিয়া চৌধুরী।

তিনি বলেন, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একজন ব্যক্তিকে সভাপতি করে প্রধানমন্ত্রীর সর্বজনীন সংবর্ধনার আয়োজন করা হবে।

বাংলাদেশের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, দেশে মহানগরগুলোতে প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠান আয়োজন করে মহানগর আওয়ামী লীগ। প্রধানমন্ত্রী নিউইয়র্ক আসছেন, তাই আমাদের দাবি সংবর্ধনাটির আয়োজন করবে নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগ।

একটি সূত্র জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রীকে সর্বজনীন সংবর্ধনা দেওয়ার আগ্রহের কথা জানিয়ে এরই মধ্যে নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী দফতরে আবেদনও করা হয়েছে। নিউইয়র্ক সফররত পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলীকেও বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে চিঠি দিয়েছেন তারা। জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ড. এ কে আবদুল মোমেনকে চিঠির অনুলিপি দেওয়া হয়েছে।

এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল বাংলাদেশ সোসাইটির সঙ্গে যৌথভাবে প্রধানমন্ত্রীকে সর্বজনীন সংবর্ধনা দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার নূরন্নবী বলেছেন, আমরা চাই বিতর্কের ঊর্ধ্বে উঠে প্রধানমন্ত্রীকে একটি সর্বজনীন সংবর্ধনা দিতে। আশা করি, প্রধানমন্ত্রীর দফতর আমাদের সে সুযোগ দেবে।

এ বিষয়ে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ড. একে আবদুল মোমেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, অনেক পক্ষই চাচ্ছে প্রধানমন্ত্রীকে সংবর্ধনা দিতে।প্রধানমন্ত্রী যেহেতু জাতিসংঘের অধিবেশনে যোগ দিতে আসছেন, তাই বরাবরের মতো এবারও আমরা তার সফরের সার্বিক দিকের দেখভাল করছি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর নাগরিক সংবর্ধনার বিষয়টি নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে প্রধানমন্ত্রীর দফতর। এ বিষয়ে আমাদের কোনো বক্তব্য নেই।

তবে ড. মোমেন বলেন, যে পক্ষই নাগরিক সংবর্ধনার আয়োজন করুক, সেন্ট্রাল পার্কের ‘গ্লোবাল সিটিজেন ফেস্টিভাল’র বিশাল অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী যোগদান যাতে ব্যাহত না হয় সেটা নিশ্চিত করতে হবে।

ড. মোমেন বলেন, এটি ভিন্নধর্মী একটি অনুষ্ঠান, যেখানে ৬০ হাজার মানুষ উপস্থিত থাকবেন। আয়োজনে মূলধারার বিভিন্ন সংগঠন।এতে বাংলাদেশ ও প্রধানমন্ত্রীর কৃতিত্বকেই স্বীকৃতি দেওয়া হবে। আমেরিকান আইডল কেরি আন্ডারউড প্রধানমন্ত্রীকে পরিচয় করিয়ে দেবেন সেখানে।

যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগই সর্বজনীন সংবর্ধনার আয়োজন করবে। আমরা অফিশিয়ালি প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানিয়েছি এবং তিনি সাদরে আমাদের আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী সংবর্ধনা অনুষ্ঠান নিয়ে তাদেরকে দিকনির্দেশনাও দিয়েছেন বলে জানান সিদ্দিকুর রহমান।

ড. একে আবদুল মোমেনের বক্তব্যের জবাবে তিনি বলেন, সেন্ট্রাল পার্কের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী যাবেন কি-না এটি প্রধানমন্ত্রী দফতর সিদ্ধান্ত নেবে। তবে, সাম্প্রতিক সময়ে ফিলিস্তিনের গাজা ও ইসরায়েল প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা যে বক্তব্য রেখেছেন তাতে ঠিক এই সময়ে ইসরায়েল প্র্রভাবিত নিউইয়র্ক সিটির খোলা একটি মাঠে (সেন্ট্রাল পার্ক) ড. মোমেন প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে যাওয়ার যে উদ্যোগ নিয়েছেন তাতে আমরা ভীষণ শঙ্কিত।

ড. সিদ্দিক জানান, নাগরিক সংবর্ধনার পাশাপাশি ওই অনুষ্ঠানে তারা জাতিসংঘে বাংলাদেশের ৪০তম বার্ষিকীও উদযাপন করবেন।

যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদুর রহমান সাজ্জাদ বলেন, আমরা প্রধানমন্ত্রী দফতরের অনুমতি পেয়েছি। এমনকি সংবর্ধনার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ও বলেছেন, ‘সব কিছু ঠিক আছে’।