Search
Close this search box.
Search
Close this search box.
নুডলস বিক্রি করে গৃহিণী থেকে বিলিয়নিয়ার
ছবি: সংগৃহিত

 

 

chardike-ad

দক্ষিণ কোরিয়ার ৬০ বছর বয়সী কিম জুং-সু ২০১১ সালে অতি ঝাল “বুলডাক” ইন্সট্যান্ট নুডলসের ধারণা দেন এবং এটি পরবর্তীতে বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা অর্জন করে।

দশ বছর আগে একটি ইউটিউব ভিডিওতে এক ব্রিটিশ ব্যক্তি দক্ষিণ কোরিয়ার বিখ্যাত ঝাল “বুলডাক” নুডলস খাওয়ার চ্যালেঞ্জ নেন। ভিডিওটি দ্রুতই ভাইরাল হয় এবং অনেকেই এই সুস্বাদু, কিন্তু অত্যন্ত ঝাল রামেন খাওয়ার ভিডিও পোস্ট করতে থাকেন। এমনকি গ্র্যামি জয়ী র‍্যাপার কার্ডি বি উল্লেখ করেন, তিনি এটি কিনতে ৩০ মিনিট গাড়ি চালিয়ে গিয়েছিলেন।

এই সাফল্যের পেছনে রয়েছেন দক্ষিণ কোরিয়ার ৬০ বছর বয়সী কিম জুং-সু, যিনি সামিয়াং রাউন্ডস্কয়ারের প্রধান নির্বাহী। ১৯৯৮ সালে পারিবারিক ব্যবসা সামিয়াং ফুডস যখন সংকটে ছিল, তখন গৃহিণী কিম শ্বশুরের অনুরোধে এই কোম্পানিতে যোগ দেন। ২০১১ সালে তিনি “বুলডাক” নুডলসের ধারণা দেন, যা পরবর্তীতে বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা অর্জন করে।

এখন বুলডাক নুডলসের বৈশ্বিক জনপ্রিয়তা সামিয়াং ফুডস কোম্পানির শেয়ারমূল্য এ বছর ২১৫ শতাংশ বৃদ্ধি করেছে। ব্লুমবার্গ বিলিয়নেয়ার ইনডেক্স অনুযায়ী, এর ফলে কিম, তার স্বামী এবং তাদের সন্তানদের সম্মিলিত সম্পদ প্রায় ১.১ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।

বর্তমানে সামিয়াং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন এবং ইউরোপে ব্যবসা সম্প্রসারণ করছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, “বুলডাক” নুডলস একসময় ক্ষণস্থায়ী ট্রেন্ড মনে হলেও, এটি ভোক্তাদের জন্য আকর্ষণীয় এবং মজার অভিজ্ঞতা হয়ে উঠেছে।

সিউলের কর্পোরেট গবেষণা প্রতিষ্ঠান লিডারস ইনডেক্সের প্রধান পার্ক জু-গুন বলেন, “কিমের কোনো পূর্ববর্তী ব্যবস্থাপনা অভিজ্ঞতা ছিল না। এটি অত্যন্ত ব্যতিক্রমী কারণ তার শ্বশুর তাকে পুরুষ পরিবার সদস্যদের পরিবর্তে কোম্পানির ব্যবস্থাপনায় যোগদানের সুযোগ দিয়েছিলেন।”

বুলডাক নুডলসের চাহিদা এতটাই বেড়েছে, কোম্পানি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়ালমার্ট এবং কস্টকোর মতো খুচরা বিক্রেতাদের জন্য যথেষ্ট সরবরাহ করতে পারছে না। প্রথম নয় মাসে সামিয়াং ফুডস-এর রাজস্ব ৪৪.২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ১.২ ট্রিলিয়ন ওয়ানে পৌঁছেছে। এর ৭৫ শতাংশ এসেছে রপ্তানি থেকে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দুই বছর আগে বুলডাক নুডলস চালু হয়েছিল। বর্তমানে এটি সামিয়াং ফুডসের বৃহত্তম বিদেশি বাজারে পরিণত হয়েছে। সামিয়াং রাউন্ডস্কয়ার-এর মুখপাত্রের লিখিত প্রতিক্রিয়া অনুযায়ী, কোম্পানির মোট বিক্রয়ের ২০ শতাংশ এখন এই বাজার থেকে আসে। গত বছরের তুলনায় এই বৃদ্ধির হার ১২০ শতাংশ।

১৯৯০-এর দশকের এশিয়ান আর্থিক সংকটের সময় দেউলিয়ার ঝুঁকিতে থাকা সামিয়াং আজ যে অবস্থানে পৌঁছেছে, তা একটি উল্লেখযোগ্য সাফল্যের গল্প। সেই সময় প্রতিষ্ঠাতা পরিবারের শেয়ারগুলো ঋণদাতাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছিল, যা ২০০৫ সালে পুনরুদ্ধার করা হয়।

তবে ২০২০ সালে কিম ও তার স্বামী কোম্পানির প্রায় ৫ বিলিয়ন উন আত্মসাৎ করে ব্যক্তিগত খরচে ব্যবহার করার দায়ে দোষী সাব্যস্ত হন। কিমের শাস্তি স্থগিত করা হয়, আর তার স্বামী [তৎকালীন সামিয়াং চেয়ারম্যান] তিন বছরের কারাদণ্ড পান। গত বছর কিমকে ক্ষমা করা হয়।

তবে এই নিয়ে ব্লুমবার্গকে কোনো মন্তব্য জানাতে রাজি হননি কিম।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনে সম্প্রসারণের পর সামিয়াং ইউরোপীয় বাজারে প্রবেশের জন্য নেদারল্যান্ডসে একটি নতুন কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেছে। ডিএস ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড সিকিউরিটিজ-এর এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, সামিয়াং-এর বৈশ্বিক বিকাশ অব্যাহত থাকবে।

ইউরোমনিটর ইন্টারন্যাশনালের গবেষণা বিশ্লেষক কেভিন হ্যান বলেন, “যখন বুলডাক বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা লাভ করে, প্রথমে এটি একটি সাময়িক প্রবণতা হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল। তবে এর পণ্যগুলো ব্যবহারকারীদের জন্য কার্যকরী সুবিধা এবং নতুন অভিজ্ঞতা প্রদান করতে পারলে, এটি বৈশ্বিক বাজারে দীর্ঘস্থায়ীভাবে বৃদ্ধি পেতে পারে।”

 

সূত্র: টিবিএস