Search
Close this search box.
Search
Close this search box.
"শুধু যোগ্যতা আর নীতিনৈতিকতা আসলে সব জায়গায় খাটে না"
ছবি: কালেক্টেড

 

২০১০ সালের দিকে ক্যারিয়ার শুরু করেন। নিজ যোগ্যতা দিয়ে কলকাতার ধারাবাহিক নাটকে নাম ভূমিকায় অভিনয় করে আলোচনায় আসেন তিনি। টানা ছোট পর্দার অভিনয়ে ব্যস্ত হন মৌসুমী হামিদ। একের পর এক তাঁর পরিচিতি বেড়েই চলছিল। ক্যারিয়ার সামনে এগিয়ে নিতে কোনো সমস্যা হয়নি। আট বছর অভিনয় করার পরে হঠাৎ করেই ক্যারিয়ারে বাধা আসে। বাধা হয়ে দাঁড়ায় মৌসুমী হামিদের উচ্চতা। হঠাৎ করেই নাকি মৌসুমী হামিদের শারীরিক উচ্চতা বেড়ে গিয়েছিল। সেই গল্পই শোনাচ্ছেন এই তারকা।

chardike-ad

এই অভিনেত্রী জানান, তিনি দীর্ঘদিন ধরেই টানা কাজ করেছেন। ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই তৌকীর আহমেদ, মোশাররফ করিম, অপূর্ব, নিশোদের সঙ্গে নিয়মিত করেছেন। কেউ কখনোই তাঁর অভিনয় নিয়ে প্রশ্ন তোলেননি। সবাই সহযোগিতা করেছেন। অথচ সেই অভিনেত্রীকে পরবর্তী সময়ে অভিনয় নিয়ে নানা প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছিল। একসময় তিনি ক্যারিয়ার থেকেই দূরে সরে যান।

 

‘নয়া মানুষ’ ছবিতে মৌসুমী হামিদ।
ছবি: ফেসবুক

মৌসুমী হামিদ বলেন, ‘আমার ক্যারিয়ারে সব সময় কাজ দিয়ে প্রশংসা পেয়েছি। এই সময়ে কখনোই কারও সঙ্গে তারকাসুলভ আচরণ করিনি। কারও শিডিউল ফাঁসাইনি। সবাইকে সহযোগিতা করেছি। এর মধ্যে ২০১৮ সালের দিকে ভিউয়ের জোয়ার শুরু হয়। তখনো নিয়মিতই কাজ করেছি। পরে অবস্থা এমন হলো, অভিনয়শিল্পীদের হাতে চলে গেল কাজ। এটা কেন যেন আমার ক্যারিয়ারে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তখন আমার কাজ তুলনামূলক কমতে থাকে। তবে এই নিয়ে কখনোই আমি আশাহত হইনি। কারণ, আমি অভিনেত্রী হিসেবে তত দিনে ভক্তদের কাছে পৌঁছেছি। দেশের নামী সব অভিনয়শিল্পী, পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করা হয়ে গেছে।’

দীর্ঘ ক্যারিয়ারে অভিনয়ের সূত্রেই অনেক সহ–অভিনয়শিল্পীর সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। এই অভিনেত্রীর কথায়, ‘একসঙ্গে কাজ করা সব শিল্পীর সঙ্গে ভালো বন্ধুত্ব ছিল। একসময় দেখা গেল তারাই সহশিল্পী হিসেবে আমাকে চাইছে না। এই নিয়ে আমি কিছু ভাবিনি। শুধু এটাই মনে হয়েছে, কাজ জানলে কাজ আসবেই। কিন্তু এখানেই আমি ভুল করেছি। আমি কখনোই কারও কাছে কাজ চাইতে যাইনি। কোনো দলে যাইনি।’

একসময় মৌসুমী হামিদ বুঝতে পারেন, তাঁর কাছের মানুষেরাই তাঁকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে। সেই অভিজ্ঞতা তাঁর জীবনকে হতাশার মধ্যে নিয়ে যায়। তিনি ২০২১ সালে কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে পড়েন। এই অভিনেত্রী বলেন, ‘তখন সবাই জুটি, জোট হয়ে কাজ করছিলেন। এর মধ্যে আমার উচ্চতা সবার কাছে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। দীর্ঘদিন কাজ করে নতুন করে শুনতে হলো, আমার উচ্চতা বেশি, আমাকে নেওয়া যাবে না। কী অদ্ভুত। হঠাৎ ২০২১ সালে আমার উচ্চতা বেড়ে গেল, আমি ডিপ্রেশনে চলে গেলাম। মানসিকভাবে তখন আমি কঠিন সময় পার করছিলাম।’

তখন ভেঙে পড়েন এই অভিনেত্রী। পাশে কাছের তেমন কেউ ছিল না। তিনি বলেন, ‘আমার নিজের ওপর ঘৃণা জন্মায়। কেন আমি এত লম্বা। আমি অসহায় অবস্থার মধ্যে ছিলাম। কিন্তু বুঝতে পারতাম কেউ কেউ না নেওয়ার জন্য এগুলো বলত। তখন আমি পুরো ডিপ্রেশনে চলে যাই। কাউকে ট্রাস্ট করতে পারতাম না। কারণ, আমার ক্লোজ বন্ধুরা আমাকে রিজেক্ট করেছে। আমি আর কাকে ট্রাস্ট করব। আমি এক অন্ধকার দুনিয়ার মধ্যে বসবাস শুরু করি। সবকিছু ঘৃণা করা শুরু করি।’

সেই সময়ে অনেক পরিচালক ছিলেন, যাঁরা তাঁর শুটিংয়ে গিয়ে শিডিউল নিয়ে আসতেন। তারাও তাঁর ভালো বন্ধু ছিলেন। মৌসুমী হামিদ জানান, তিনি যাদের সহায়তা করেছেন, তারাও একসময় এড়িয়ে যেতে থাকে। ক্যারিয়ার তাঁকে কঠিন এক পরিস্থিতির মধ্যে ফেলে দেয়। কিন্তু বাস্তবতা তাঁকে মেনে নিতে হয়। তিনি অপেক্ষা করেছেন সুদিন আবার ফিরবে।

এই সময় তিনি আরও আরও জানান, শিল্পী হিসেবে কেন প্রযোজকদের দরজায় যেতে হবে কাজ চাইতে, তারা তো সবাই জানেন তিনি অভিনেত্রী হিসেবে কেমন। তিনি প্রশ্ন রাখেন, ‘তাহলে কি ভালো পারফরম্যান্সের কোনো দাম নাই। অভিনয়ে মনোযোগ দিয়ে কোনো লাভ নাই?’

‘আমি লাক্স থেকে শুরু করে দীর্ঘ ক্যারিয়ারে যাঁদের কাছ থেকে শিখেছি, যাঁরা আমার শিক্ষকের মতো ছিলেন, তাঁরা সবাই আমাকে একটা কথাই বলেছেন, বুঝে শিখে অভিনয়ে গুরুত্ব দিতে। আমি ক্যারিয়ারে সেটাই করে গেছি। কিন্তু এখানে আমার নিজেরও কিছু দোষ আছে। আমার অযোগ্যতা, আমি ইন্ডাস্ট্রি বুঝে কাজ করিনি। শুধু যোগ্য যোগ্য আর নীতিনৈতিকতা আসলে সব জায়গায় খাটে না। বুঝেশুনে পথ চলতে হয়। দোষ হলেও, এই পথে না হেঁটে আমি বন্ধু চিনেছি। এখন আমার কারও কাছ থেকে খুব বেশি প্রত্যাশা নেই। এখন আর আমি হতাশ হই না। এখন আমার যা ভালো লাগে, তা–ই করি।’

৬ ডিসেম্বর সিনেমা মুক্তি পেয়েছে মৌসুমী হামি–রওনক হাসান অভিনীত সিনেমা ‘নয়া মানুষ।’ এটি পরিচালনা করেছেন সোহেল রানা বয়াতি। সিনেমাটি নিয়ে মন খারাপ করে মৌসুমী হামিদ বলেন, ‘এত কষ্ট করে শুটিং করলাম, সেই সিনেমা কোনো প্রচার প্রচারণা ছাড়াই হুট করে এখন মুক্তি পেল। এটা ভালো সময়ে মুক্তি পেলে হয়তো আরও বেশি দর্শক পেত। পরিশ্রমটা আরও বেশি সার্থক হতো।’