জামালপুর শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে হামলা ও ভাঙচুর করেছে অস্ত্রধারী একদল দুর্বৃত্ত। হাসপাতাল ভাঙচুরের পর জেলা বিএনপি দলীয় কার্যালয়েও হামলা করে ওই দুর্বৃত্তরা। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত একটার দিকে শহরের সরদারপাড়া এলাকায় বেসরকারি এম এ রশিদ হাসপাতাল ও শফি মিয়ার বাজার এলাকায় জেলা বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।
হাসপাতাল ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, একটি মাইক্রোবাস ও কয়েকটি মোটরসাইকেলে করে আগ্নেয়াস্ত্রসহ ইউনাইটেড ট্রাস্টের বেসরকারি এম এ রশিদ হাসপাতালে সামনে গিয়ে দাঁড়ায় একদল দুর্বৃত্ত। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ওই দুর্বৃত্তের দল হাসপাতালের অভ্যর্থনা ডেস্ক, ফার্মেসি, জরুরি বিভাগ, সিটিস্ক্যান ও এক্স-রে কক্ষে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করে। এ সময় দুর্বৃত্তদের হাতে অস্ত্র ছিল। তারা অস্ত্র প্রদর্শন করে ভয় দেখায়। সেখান থেকে যাওয়ার পথে শহরের শফি মিয়ার বাজার এলাকায় জেলা বিএনপির বন্ধ থাকা দলীয় কার্যালয়েও হামলা চালায় ও অস্ত্র প্রদর্শন করে ওই দুর্বৃত্তরা। পরে খবর পেয়ে পুলিশ, সেনাবাহিনী ও জেলা বিএনপির নেতারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
রাতেই জামালপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শাহ মো. ওয়ারেছ আলী মামুন হাসপাতালটি পরিদর্শনে যান। সেখানে তিনি বলেন, ‘এই হাসপাতালে কোনো কারণ ছাড়াই হামলা ও ভাঙচুর করা হয়েছে। হাসপাতালে প্রকাশ্যে অস্ত্র প্রদর্শনও করা হয়েছে। পরবর্তী সময় এসব অস্ত্রধারী আমাদের বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের সামনে গিয়ে অস্ত্র প্রদর্শন ও দলীয় কার্যালয়ে হামলা চালিয়েছে। সেখানে আমাদের দলীয় নেতা-কর্মীদের নাম ধরে গালিগালাজ করেছে।’
জামালপুরের পরিবেশকে অশান্ত করার গভীর একটি চক্রান্ত হিসেবে সন্ত্রাসী বাহিনী এই কর্মকাণ্ড করেছে বলে মনে করেন মো. ওয়ারেছ আলী মামুন। তিনি বলেন, তাঁরা যে দলেরই হোক, তাঁরা যদি বিএনপিরও হয়, ব্যবস্থা নেওয়া হবে। হাসপাতালে ভাঙচুরের ভিডিও ফুটেজ আছে। সেই ফুটেজ দেখে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার ও অস্ত্র উদ্ধার করতে হবে। আর জামালপুরের পুলিশ প্রশাসন যদি এটি করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে জামালপুরবাসী এর বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলবে।
দুর্বৃত্তদের মধ্যে কারও পরিচয় পেয়েছেন কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘শুভ পাঠান ও নবীনের নাম আমরা শুনেছি। ভিডিও ফুটেজ আছে। ভিডিও ফুটেজ দেখলেই সব পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যাবে।’
শুভ পাঠান জামালপুর জেলা জিয়া সাইবার ফোর্সের আহ্বায়ক ও মাকসুদুর রহমান ওরফে নবীন জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। এ বিষয়ে কথার বলার জন্য তাঁদের দুজনের মুঠোফোন নম্বরে কল দিলে সেগুলো বন্ধ পাওয়া যায়।
এম এ রশিদ হাসপাতালের ব্যবস্থাপক (অ্যাডমিন) সিব্বির আহম্মেদ বলেন, ‘দুর্বৃত্তদের সঙ্গে আমাদের কোনো সমস্যা নাই। হঠাৎ গতকাল রাতে তাঁরা মদ্যপ অবস্থায় হাসপাতালে ঢুকে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। কী কারণে তাঁরা এই ভাঙচুর করেছে আমাদের জানা নেই। এ সময় অস্ত্রধারীরা সবাইকে অস্ত্র দেখিয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে। এতেও হাসপাতালের রোগী, চিকিৎসক, নার্স, কর্মচারীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। এ বিষয়ে আমরা আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
জামালপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু ফয়সল মো. আতিক বলেন, এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন। দ্রুত সময়ের মধ্যে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করা হবে।