Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

৯০  দিন অনাদায়ি থাকলেই খেলাপি হবে ব্যাংকঋণ

 

chardike-ad

২০২৫ সালের এপ্রিল থেকে তিন মাসের বেশি অনাদায়ি থাকা ঋণ নন-পারফর্মিং ঋণ (এনপিএল) হিসেবে চিহ্নিত হবে। বর্তমানে এ সময়সীমা ছয় মাস। বাংলাদেশ ব্যাংক আন্তর্জাতিক মানদণ্ড ব্যাসেল-৩-এর সঙ্গে নিয়মটি মিলিয়ে এ পরিবর্তন আনছে।

বুধবার (২৭ নভেম্বর) কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণের শ্রেণিবিন্যাস ও প্রভিশন নীতিমালা সংশোধন করে একটি মাস্টার সার্কুলার জারি করেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এ পরিবর্তনের ফলে অনেক ঋণ এনপিএল হিসেবে চিহ্নিত হবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২০১২ সাল থেকে ওভারডিউ নীতিমালা আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে মিল ছিল। তবে ২০১৯ সালে, আওয়ামী লীগ সরকারের সময়, মেয়াদি ঋণের ক্ষেত্রে প্রাথমিক তিন মাসের পর আরও ছয় মাসের গ্রেস পিরিয়ড দেওয়া হয়। এতে অনেক ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি সুবিধা পেয়েছিলেন।

ফলে, কেউ যদি নয় মাসের মধ্যে ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে ব্যর্থ হতেন, তখন সেটি এনপিএল হিসেবে চিহ্নিত হতো।

আইএমএফের শর্ত মেনে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর থেকে ওভারডিউ সময়সীমা ছয় মাসে কমিয়ে আনা হয়েছে। এটি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বাংলাদেশকে দেওয়া ৪.৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ প্যাকেজের একটি শর্ত।

এরপর এ পরিবর্তনের প্রভাব দেখা যায়। সেপ্টেম্বর ত্রৈমাসিকে এনপিএল ৭৩ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকায় পৌঁছায়, যা রেকর্ড বৃদ্ধি। সেপ্টেম্বরে মোট এনপিএল বেড়ে দাঁড়ায় দুই লাখ ৮৪ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকায়। এটি দেশের মোট বকেয়া ঋণের (প্রায় ১৬.৮৩ লাখ কোটি টাকা) ১৭ শতাংশ।

ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আরএফ হোসেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, ‘যদি বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন নিয়ম আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী হয়, তবে আমাদের তা মানতে হবে। তবে স্বল্পমেয়াদে এটি ব্যাংকগুলোর জন্য কিছু চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে।’

এ অভিজ্ঞ ব্যাংকার বলেন, দেশের ব্যাংকিং খাতে যেসব স্ট্রেসড অ্যাসেট আছে, সেগুলো সঠিকভাবে চিহ্নিত করতে হবে। তিনি আশা করেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ব্যাংকিং খাত ঘুরে দাঁড়াবে।

অর্থনৈতিক চক্র ও বৈশ্বিক পরিবর্তন, ঋণগ্রহীতাদের ঝুঁকি এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বিবেচনায় ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা আরও শক্তিশালী করতে নিয়মিত এনপিএল নীতিমালা পর্যালোচনা ও হালনাগাদ করা জরুরি।

ব্যাসেল-৩-এর নিয়ম অনুযায়ী, মূল তত্ত্বাবধায়ককে নিশ্চিত করতে হবে যে, ব্যাংকগুলোতে ঋণ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার সঠিক পদ্ধতি রয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক ২০২৭ সালের মধ্যে ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং স্ট্যান্ডার্ডস অনুযায়ী এক্সপেক্টেড ক্রেডিট লস পদ্ধতি-ভিত্তিক প্রভিশনিং ব্যবস্থা চালু করার পরিকল্পনা করছে।’

নতুন নীতিমালা অনুযায়ী, সব ধরনের ঋণ ও অ্যাডভান্স চারটি শ্রেণিতে ভাগ করা হবে—চলমান ঋণ, চাহিদাভিত্তিক ঋণ, নির্দিষ্ট মেয়াদের ঋণ এবং স্বল্পমেয়াদি কৃষি ঋণ।

ক্লাসিফিকেশন অ্যান্ড প্রভিশনিং রুল অনুযায়ী, বকেয়ার সময় থেকে পরবর্তী তিন মাস পর্যন্ত সব ধরনের ঋণকে স্পেশাল মেনশন অ্যাকাউন্টস (এসএমএ) হিসেবে চিহ্নিত করা হবে।

ছয় মাস পর্যন্ত বকেয়া ঋণ নিম্নমানের, ছয় থেকে নয় মাসের জন্য বকেয়া ঋণ সন্দেহজনক, আর এক বছরের বেশি সময় ধরে বকেয়া থাকা ঋণ মন্দ হিসেবে চিহ্নিত হবে।

সব ধরনের ঋণ মানসম্মত ঋণ হলে, ব্যাংকগুলো বকেয়া ঋণের বিপরীতে ১ শতাংশ প্রভিশন রাখবে। এসএমএ হিসেবে চিহ্নিত হলে প্রভিশন হবে ৫ শতাংশ।

নিম্নমানের ঋণের জন্য প্রয়োজন হবে ২০ শতাংশ প্রভিশন। ঋণ সন্দেহজনক তালিকায় উঠলে তার জন্য এ হার হবে ৫০ শতাংশ এবং ক্ষতিগ্রস্ত ঋণের জন্য প্রভিশন হবে ১০০ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ শাহরিয়ার সিদ্দিকী বলেন, ব্যাংকিং খাতে সংস্কারের জন্য সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে।

‘নতুন মাস্টার সার্কুলারের মাধ্যমে ঋণের প্রকৃত মান সহজেই নির্ধারণ করা যাবে। এটি ২০১২ সালের পর প্রথমবারের মতো চালু করা হয়েছে,’ তিনি বলেন।