বর্তমান বিশ্বে ধনী-গরীবের সম্পদের বৈষম্য দিন দিন বাড়ছে। অক্সফামের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ২০১৮ সালে ধনীর সম্পদ বেড়েছে ১২ শতাংশ। আর দরিদ্র মানুষের কমেছে ১১ শতাংশ।
২০২৪ সালের অক্সফামের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৫ জন বিলিয়নিয়ারের সম্পদ দ্বিগুণ হয়েছে, একইসাথে ৫ বিলিয়ন মানুষ দ্রারিদ্রতার খপ্পড়ে পড়েছে। এই দ্রারিদ্রতা নির্মূল করতে ২৩০ বছর লাগতে পারে, নির্মূলের পরিবর্তে আগামী দশকে একজন ট্রিলিয়নিয়ারের উত্থান দেখা যেতে পারে।
সম্পদ-বৈষম্য অক্সফাম ইন্টারন্যাশনালের কেন্দ্রীয় গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনাগুলোর একটি।
ধারাবাহিকভাবে তারা এ নিয়ে বাৎসরিক প্রতিবেদন হাজির করে থাকেন। ২০১৬ সালে ৬২ ধনীর হাতে বিশ্বের দরিদ্রতম অর্ধেক মানুষের সম্পদ কুক্ষিগত থাকার কথা জানিয়েছিল অক্সফাম। ২০১৭ সালে অর্ধেক দরিদ্রতম মানুষের সম্পদ চলে যায় ৬১ জনের হাতে।
২০১৮ সালে প্রকাশিত প্রতিবেদনের পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, দরিদ্রতম অর্ধেক মানুষের সম্পদ চলে গেছে বিশ্বের মাত্র ৪২ জন ধনীর হাতে। সংস্থাটির এবারের প্রতিবেদনে সেই বৈষম্য আরও প্রকট হওয়ার আভাস পাওয়া গেছে। ৫ জন বিলিয়নিয়ারের সম্পদ দ্বিগুণ হয়েছে, একইসাথে ৫ বিলিয়ন মানুষ দ্রারিদ্রতার খপ্পড়ে পড়েছে। অক্সফামের দাবি, ১২ মাসে ধনকুবেরদেরকে প্রতি দুই দিন পর পরই সম্পদ অর্জনের নতুন রেকর্ড গড়তে দেখা গেছে। অথচ একই সময়ে বিশ্ব জনসংখ্যার দরিদ্রতম ৫০ শতাংশ মানুষের সম্পদের পরিমাণ বাড়ার কোনও লক্ষণ দেখা যায়নি।
বিগত চারটি বছর বিশ্বের ধনী ব্যক্তিদের সৌভাগ্যের চাকা এত দ্রুত ঘুরেছে যে তাঁদের মোট সম্পদ দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। এই সময়ে বিশ্বের প্রায় ৫০০ কোটি মানুষ আগের চেয়ে আরও বেশি গরিবে পরিণত হয়েছেন।
পৃথিবীবাসী আগামী এক দশকের মধ্যেই বিশ্বের প্রথম ট্রিলিয়নিয়ার দেখতে পাবে। অক্সফামের হিসাব অনুসারে, মূল্যস্ফীতির হিসাব বিবেচনায় নিয়েই ২০২০ সাল থেকে বিশ্বের শীর্ষ ৫ বিলিয়নিয়ারের মোট সম্পদ ৪০৫ বিলিয়ন ডলার থেকে ১১৪ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৬৯ বিলিয়ন ডলার।
অক্সফাম জানিয়েছে, গত ৪ বছরে বিশ্বের শীর্ষ ৫ ধনী ফরাসি বিলাসী পণ্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠা লুই ভিতোঁর প্রধান বার্নার্ড আর্নল্ট, আমাজনের জেফ বেজোস, বিনিয়োগকারী ওয়ারেন বাফেট, ওরাকলের সহপ্রতিষ্ঠাতা ল্যারি এলিসন এবং টেসলার সিইও ইলন মাস্ক। এই ৫ ধনকুবেরের সম্পদ প্রতি ঘণ্টায় ১৪ মিলিয়ন ডলার হারে বেড়েছে বলে জানিয়েছে অক্সফাম।
সম্পদশালী হওয়ার দৌড়ে সবচেয়ে এগিয়ে ইলন মাস্ক। তিনি টেসলা, স্পেসএক্স, এক্সসহ (সাবেক টুইটার) বেশ কয়েকটি সংস্থা চালান। গত বছরের নভেম্বরের শেষ নাগাদ তাঁর সম্পদ বেড়ে দাঁড়ায় ২৪৫.৫ বিলিয়ন ডলার, যা ২০২০ সালের মার্চের তুলনায় ৭৩৭ শতাংশ বেশি।
এই চূড়ান্ত বৈষম্য কথা জার্মান দার্শনিকগণ বলে গিয়েছিলেন। তাদের মতে ধনী গরিবের বৈষম্য দিন দিন বাড়বে। ফলে এই সমাজব্যবস্থা চরম বিশৃঙখলায় পড়ে যাবে। আর এই বিশৃঙ্খলার কেন্দ্রবিন্দু হবে ধনী ও গরীবের দ্বন্দ্ব।