দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত ২৪ জন জাপানি সৈনিকের দেহাবশেষ কুমিল্লার ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রি থেকে সমাহিত করার ৮১ বছর পর সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। তাদের দেহাবশেষ নেওয়া হবে জাপানে। এরই মধ্যে জাপান থেকে সাত সদস্যের একটি ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ দল ওই সৈনিকদের দেহাবশেষ সরিয়ে নেওয়ার কার্যক্রম শুরু করেছেন।
বিশেষজ্ঞ দলটির সাতজনের মধ্যে ছয়জনই জাপানের নাগরিক। তাদের সহায়তা করছে বাংলাদেশ সরকার। সমাধিস্থলের মাটি খুঁড়তেই মিলছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত জাপানি সৈনিকদের মাথার খুলিসহ শরীরের বিভিন্ন অংশের হাড়। সেগুলো অত্যন্ত যত্নসহকারে সংরক্ষণ করা হচ্ছে। কমনওয়েলথ গ্রেভইয়ার্ড কমিশন এ যুদ্ধ সমাধিক্ষেত্র তৈরি ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করে আসছে।
জানা গেছে, ওয়ার সিমেট্রির উত্তর-পশ্চিম কোণে থাকা সমাধি থেকে জাপানি সৈনিকদের দেহাবশেষ সরানোর কাজ চলছে। সেখানে দর্শনার্থীসহ সাধারণ মানুষের প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। নিরাপত্তার কারণে সেখানে কর্মরত ব্যক্তি, সেনাবাহিনী, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের বাইরে সাধারণ কাউকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।
মুক্তিযুদ্ধ-গবেষক ও স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) কাজী সাজ্জাদ আলী জহির বীর প্রতীক জাপানের প্রতিনিধিদের সঙ্গে এ কাজে শুরু থেকেই সহায়তা করছেন।
কমনওয়েলথ ওয়ার গ্রেভস কমিশনের পক্ষে সেখানে দায়িত্ব পালন করা কান্ট্রি অ্যাডমিনিস্ট্রেটর আবদুর রহিম সবুজ বলেন, গত বুধবার সকাল থেকে জাপানের প্রতিনিধি দল খনন কার্যক্রম শুরু করে। এখানে সমাহিত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নিহত বিশ্বের ১৩টি দেশের ৭৩৭ জন বীর সৈনিকের মধ্যে জাপানের রয়েছে ২৪ জন। তারা ২৪ জন সৈনিকের দেহাবশেষই সরিয়ে নিয়ে যাবে। আগামী ২৪ নভেম্বরের মধ্যে এই কার্যক্রম শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) কাজী সাজ্জাদ আলী জহির বীর প্রতীক দীর্ঘদিন ধরে কবর (সমাধি) শনাক্তকরণ, দেহাবশেষ সরিয়ে নেওয়ার কাজ করছেন। বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের দেহাবশেষ সরিয়ে আনার কাজটিও করেছেন তিনি। জাপানের প্রতিনিধি দলের পক্ষে পুরো কর্মযজ্ঞের বর্ণনা দিয়েছেন কাজী সাজ্জাদ আলী জহির বীর প্রতীক।
তিনি আরও বলেন, জাপান সরকার ২০১৩ সালে আমাকে তাদের দূতাবাসে ডেকেছিল এই ২৪ জাপানি সৈনিকের দেহাবশেষ সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে। এই সমাধিগুলো ৮১ বছরের পুরোনো। এরই মধ্যে আমরা ১০ জনের দেহাবশেষ সমাধি থেকে উত্তোলন করতে পেরেছি।
দেহাবশেষে কী কী পাওয়া যাচ্ছে, জানতে চাইলে আবেগাপ্লুত হয়ে এই বীর প্রতীক বলেন, আমরা এক তরুণ সৈনিকের দেহাবশেষ তুলতে গিয়ে মাথার খুলির মধ্যে বুলেটের চিহ্ন পেয়েছি। রেকর্ড অনুযায়ী ওই সৈনিকের বয়স ২৮ বছর ছিল। আমার তখন বুকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করেছে। এত তরুণ বয়সে পৃথিবী থেকে চলে গেছে সে। এখানে জাপানের সৈনিকদের ২৪ সমাধির মধ্যে ২০টির নাম-পরিচয় আছে। বাকি চারটির পরিচয় শনাক্ত করা এখনো সম্ভব হয়নি।
উল্লেখ্য, কুমিল্লার ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রিতে ১৯৪১ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত ১৩টি দেশের ৭৩৮ জন সেনাকে সমাহিত করা হয়। প্রতি বছরের নভেম্বরে কমনওয়েলথভুক্ত দেশের হাইকমিশনারসহ তাদের প্রতিনিধিরা এই সমাধিস্থলে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদনের মাধ্যমে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নিহতদের স্মরণ করে।সেই ধারাবাহিকতায় চলতি বছরের ৯ নভেম্বর ১৩ দেশের কূটনীতিকরা সেখানে শ্রদ্ধা জানাতে আসেন।