শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়াম, যেখানে কখনো শোনা যায় না বাংলাদেশের জয়ধ্বনি, সেই মাঠেই আজ নতুন ইতিহাসের সূচনা। দীর্ঘ অপেক্ষার পর অবশেষে বাংলাদেশ পায় প্রথম জয়, আর সেই জয়ের সঙ্গে ফিরিয়ে আনে সিরিজের সমতা। আজ, একদিনের ম্যাচে আফগানিস্তানকে ৬৮ রানে পরাজিত করে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে।
শান্তর নেতৃত্বে জয়ের পথ
ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের সূচনা ছিল ধীর, কিন্তু দৃঢ়। তানজিদ তামিমের ২২ রানের বিদায়ের পর সৌম্য সরকার আর নাজমুল হোসেন শান্ত গড়েন ৭১ রানের এক দৃঢ় জুটি। শান্ত, এক পোক্ত পাহাড়ের মতো, ৭৬ রানে দাঁড়িয়ে থেকেছিলেন। তার সঙ্গে মিরাজের ২০ রান, মাঝখানে কিছুটা ধস হলেও শেষ পর্যন্ত জাকের আলী অনিক এবং নাসুম আহমেদের দৃঢ়তার ওপর ভর করে বাংলাদেশ পৌঁছায় ২৫২ রানে।
এ ছিল এক সংগ্রামী ইনিংস, যেখানে মাঝে মাঝে ব্যাটিং ধস দেখে মনে হয়েছিল হাওয়া পেরিয়ে যাবে। কিন্তু জাকের এবং নাসুমের ব্যাট থেকে এসেছে প্রয়োজনীয় রান, তাদের হাত ধরে বাংলাদেশ পাড়ি দেয় কাঙ্ক্ষিত ২৫০ রান। শেষবেলায় ৩৭ রানে জাকের আলী অনিক এবং ২৪ বলে ২৫ রান করা নাসুম আহমেদ যেন জানিয়ে দেন, কোনো বাধাই অসম্ভব নয়, যদি দলীয় শক্তি আর একতাই থাকে।
বোলিংয়ে বাংলাদেশ: এক স্বপ্নীল লড়াই
যখন আফগানিস্তান তাড়া করতে নামে, তখন বাংলাদেশ বোলাররা যেন এক নতুন রূপে আবির্ভূত হয়। তাসকিনের হাতে প্রথম সাফল্য, গুরবাজের বিদায়। এরপর শুরু হয় নাসুমের নৃত্য, আর শরীফুল ইসলামের স্লিপে সৌম্যের ক্যাচ—এক এক করে কেটে যায় আফগানিস্তানের স্বপ্ন।
মোস্তাফিজুর রহমান, মিরাজ, নাসুম—সবাই একে একে তুলে আনেন উইকেট। ১১৮ রানে দুই উইকেট থেকে আফগানিস্তান ১১৯ রানে গিয়ে হারায় আরো পাঁচ উইকেট। মনে হচ্ছিল, যেন এক মায়াবী সুতায় বাঁধা হয়ে গিয়েছে তাদের।
শেষে, আফগানদের বিস্ফোরক ব্যাটসম্যানদের একটি একটি করে উইকেট পড়তে থাকে। রশিদ খান, নবী, গাজানফার—তারা কোনো বিপ্লব ঘটাতে পারেননি। নাসুমের বোল্ডে গাজানফারের বিদায়, মোস্তাফিজের স্লোয়ারে রশিদের ক্যাচ—সব কিছু যেন বাংলাদের সুরে বাঁধা, এক সুরেলা শেষ।
সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে এখন নতুন আশা
আজকের জয় শুধু একটি ম্যাচের জয় নয়, এটি বাংলাদেশ ক্রিকেটের একটি নতুন অধ্যায়। শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে নিজেদের প্রথম জয় নিয়ে বাংলাদেশ ফিরে এল। সিরিজের তৃতীয় এবং শেষ ম্যাচটি এখন অপেক্ষার খেলা। ১১ নভেম্বর সেই ম্যাচে এক নতুন ইতিহাস রচনা হতে পারে, যেখানে লাল-সবুজের পতাকা উড়ে যাবে আরও উঁচুতে।
বাংলাদেশের ক্রিকেট প্রেমী মনের আশা, আগামী দিনগুলোয় যেন এই জয় ছড়িয়ে যায় আরও অনেক জায়গায়, আরও অনেক উচ্চতায়।