২০১২ সালে প্রণীত শিক্ষাক্রমের আলোকে নতুন বছরের জন্য পাঠ্যবই পরিমার্জন করছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। আগামী বছরের জানুয়ারিতে নতুন বই তুলে দেওয়ার চেষ্টা করছে তারা। তবে অনেক শ্রেণির বই এখনো ছাপা শুরু না হওয়ায় সময়মতো শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
যদিও এনসিটিবি বলছে, শর্ত অনুযায়ী মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ করলে সময়মতো বই শিক্ষার্থীদের হাতে দেওয়া সম্ভব হবে। আর শিক্ষাবিদদের মতে, নতুন বই ছাপাতে এখনও সময় আছে। তবে সময় কম থাকায় গুরুত্বপূর্ণ বইগুলো আগে ছেপে সেগুলো আগে শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া যেতে পারে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির বই ছাপার জন্য প্রেসে পাঠানো হয়েছে। পর্যায়ক্রমে অন্য শ্রেণির বইও যাবে। এবার বইয়ের কাগজের ওজন ৭০ গ্রাম থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ৮০ গ্রাম। আর উজ্জ্বলতা ৮০ শতাংশ থেকে বেড়ে হবে ৮৫ শতাংশ। নতুন বছরের জন্য দশম শ্রেণি পর্যন্ত সবমিলিয়ে ৪০ কোটি নতুন বই ছাপানো হবে বলে এনসিটিবির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
জানা গেছে, চলতি বছর শেষ হতে আর মাত্র দুই মাস বাকি থাকলেও কয়েকটি শ্রেণির বই ছাপানোর কাজই শুরু হয়নি। মাধ্যমিকের দরপত্রের প্রক্রিয়াও পুরোপুরি শেষ হয়নি। মুদ্রণ ব্যবসায়ীরা বলছেন, আগামী বছরের মার্চের আগে সব শ্রেণির বই শিক্ষার্থীদের কাছে হয়তো দেওয়া সম্ভব হবে না।
নতুন বই ছাপাতে দায়িত্বশীলদের গুরুত্ব কম জানিয়ে মুদ্রণ মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি তোফায়েল খান বলেছেন, নতুন বই ছাপানোর পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে প্রশাসনের যেমন আকাঙ্ক্ষা বা গুরুত্ব থাকা প্রয়োজন, তা নেই। এ কারণে সব বই ছাপানোর কাজ ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হবে না।
ক্ষমতা গ্রহণের পর নতুন শিক্ষাক্রম বা জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা-২০২১ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। ২০২৫ সালে পরিমার্জিত শিক্ষাক্রম চূড়ান্ত করে ২০২৬ সাল থেকে তা কার্যকর করা হবে। তার আগে ২০২৫ সালে শিক্ষার্থীদের জন্য ২০১২ সালের শিক্ষাক্রমের বই পরিমার্জন করে দেওয়া হবে।
এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) এনসিটিবির চেয়ারম্যান এ কে এম রিয়াজুল হাসান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, মুদ্রণ মালিকরা মূলত জরিমানার ভয়ে এ ধরনের কথা বলেন। তারা অপেক্ষায় থাকেন কাগজের দাম কমার। তবে এখনও যথেষ্ট সময় আছে। তারা শর্ত অনুযায়ী ডিসেম্বরের মধ্যে বই দিয়ে দিলে কোনও সমস্যা হবে না।
প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত বই ছাপার জন্য পাঠানো হয়েছে জানিয়ে এনসিটিবির চেয়ারম্যান বলেন, ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত ছাপার জন্য প্রস্তুত। আর সপ্তম থেকে দশম পর্যন্ত আজকালের মধ্যে প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। সবমিলিয়ে এবার ৪০ কোটি বই ছাপা হবে বলে জানান তিনি।
প্রতিবছর স্কুল, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাধ্যমিক পর্যায়ের ১ কোটি ৮৯ লাখ শিক্ষার্থীর জন্য নতুন বই ছাপায় এনসিটিবি। তাদের কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী, মে-জুন মাসে বইয়ের পাণ্ডুলিপি প্রুফ রিডারদের দেখানোর কথা ছিল। তবে এবার সেপ্টেম্বরে বই সংশোধনের ঘোষণা এসেছে। এতে আগামী বছরের শুরুতে সংশোধিত বই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছানো নিয়ে শঙ্কা দেখা দেয়।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) অধ্যাপক মোহাম্মদ আশরাফ সাদেক দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, নতুন বই যদি সময়মতো দেওয়া সম্ভব না হয়, তাহলে গুরুত্বপূর্ণ বইগুলো আগে দেওয়া যেতে পারে। আর জানুয়ারি মাসের মধ্যে যাতে সব বই দেওয়া সম্ভব হয়, সে বিষয়ে কাজ করতে হবে।
তিনি বলেন, যদি সময়মতো বই দেওয়া নাও যায়, তাহলে পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যাবে, বিষয়টি এমন না। সেক্ষেত্রে ইবুক বা পিডিএফ শিক্ষকদের দেওয়া যেতে পারে। সেগুলো দেখে তারা পাঠদান এগিয়ে নেবেন। তবে ৪৫ দিন বা ৯০ দিন যত সময়ই লাগুন, জানুয়ারি পর্যন্ত সে সময়টা ছাপার জন্য আছে।