রাষ্ট্রায়ত্ত বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিল কর্পোরেশনের (বিটিএমসি) সঙ্গে প্রাইভেট-পাবলিক পার্টনারশিপের ভিত্তিতে, গত ২৭ বছর ধরে বন্ধ থাকা সরকারি দুটি টেক্সটাইল চালু করতে যাচ্ছে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ।
সীতাকুণ্ডের আরআর টেক্সটাইল মিল ও রাজশাহী টেক্সটাইলকে চালু করার উদ্দেশ্যে রোববার (২৬ অক্টোবর) প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ ও বিটিএমসির মধ্যে ৩০ বছর মেয়াদী একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। মিল দুটিকে যথাক্রমে চিটাগাং আরআর টেক্সটাইল লিমিটেড এবং বরেন্দ্র রাজশাহী টেক্সটাইল লিমিটেড নামে রি-ব্র্যান্ড করা হয়েছে।
বস্ত্র-পাট ও নৌ পরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেন চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন।
উপদেষ্টা সাখাওয়াত হোসেন বলেন, “প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের দুটিসহ এখন পর্যন্ত ৭টি কল চালুর চূড়ান্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। বাকি আছে আরও ১৭টি। ইজারা ও পিপিপি—উভয় দিক থেকে বাকিগুলো চালুরও চেষ্টা করা হবে।”
প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী বলেন, “আমরা ৩০ বছরের জন্য এই মিলগুলোর দায়িত্ব নিয়েছি এবং আশা করছি, মিল দুটির মাধ্যমে অনেক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।”
তিনি বলেন, “আমরা ১ মাসের মধ্যে এই মিলগুলো ফের চালু করতে চাই।”
“এগুলো হবে সবুজ কারখানা। এর এক ইঞ্চি জায়গাও খালি থাকবে না। আমরা কারখানার পাশাপাশি খালি জায়গায় সোলার প্যানেল তৈরি করে থাকি। এগুলোকেও আমরা সবুজ কারখানা হিসেবেই গড়ে তুলতে চাই।”
তিনি আরও বলেন, “উত্তরবঙ্গের সর্ববৃহৎ মিল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে বরেন্দ্র রাজশালী টেক্সটাইল মিল। মানুষকে বাড়িঘর ছেড়ে আর ঢাকায় যেতে হবে না। উত্তরবঙ্গের মানুষ তাদের এলাকাতেই কাজ করার সুযোগ পাবেন।”
সীতাকুণ্ডের আর আর টেক্সটাইল মিল ১৯৬৩ সালে ১৯ দশমিক ৪৮ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত এর উৎপাদন কার্যক্রম চলমান ছিল।
এর আগে, ২০১৭ সালের ২০ ডিসেম্বর অর্থনৈতিক বিষয়–সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে এটি পিপিপির ভিত্তিতে পরিচালনার জন্য নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়।
পরবর্তী সময়ে বেসরকারি অংশীদার নির্বাচনের জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হয়। দরপত্রে অংশ নেয় তিনটি প্রতিষ্ঠান, যারা কারিগরিভাবে যোগ্য (রেসপনসিভ) হয়। প্রস্তাব মূল্যায়নকারী কমিটি (টিইসি) সর্বোচ্চ স্কোর অর্জনকারী হিসেবে প্রাণ কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে ৩০ বছর মেয়াদে চুক্তি সইয়ের পক্ষে মত দেয়।
আর আর টেক্সটাইলের জায়গা ব্যবহারের জন্য এককালীন ১০ কোটি টাকা বিটিএমসিকে দেবে প্রাণ কনসোর্টিয়াম। তার বদলে পাবে তিন বছর গ্রেস পিরিয়ড। গ্রেস পিরিয়ড শেষে প্রতিবছর ৩ কোটি ২২ লাখ টাকা বিটিএমসিকে দেবে। চুক্তির মেয়াদ হবে ৩০ বছরের। কার্যক্রম সন্তোষজনক হলে মেয়াদ আবার নবায়ন করা হবে।
এদিকে, রাজশাহী টেক্সটাইল মিল প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৭৫ সালে। এটি ২৬ দশমিক ৩৪ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত। এ বস্ত্রকলও বন্ধ ১৯৯৭ সাল থেকে। আর আর টেক্সটাইলের মতো এটিও পিপিপি ভিত্তিতে পরিচালনার জন্য ২০১৭ সালের ২০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত অর্থনৈতিক বিষয়–সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে নীতিগত অনুমোদন পায়।
পরে বেসরকারি অংশীদার নির্বাচনের জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হলে প্রাণ-আরএফএলের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান চরকা টেক্সটাইল কারিগরিভাবে যোগ্য বলেও বিবেচিত হয়। প্রস্তাব মূল্যায়নকারী কমিটি চরকা টেক্সটাইলের সঙ্গে ৩০ বছর মেয়াদে চুক্তির সুপারিশ করে।
বলা হয়, বেসরকারি অংশীদার কলটির জায়গা ব্যবহারের জন্য এককালীন ৬ কোটি টাকা পরিশোধ করবে। এছাড়া ৩ বছর গ্রেস পিরিয়ড পাবে। গ্রেস পিরিয়ড শেষে পরবর্তী বছর থেকে প্রতিবছরের জন্য ১ কোটি ৭১ লাখ ৫০ হাজার টাকা করে বিটিএমসিকে দেবে।
বিটিএমসি বলছে, বন্ধ বস্ত্রকল মোট ২৪টি, এর মধ্যে ১৬টি পিপিপিতে পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বস্ত্রকল চালু করার জন্য সংস্থাটি অবশ্য ইজারা এবং পিপিপি—দুইভাবেই এগোচ্ছে। তবে ফেনীর দোস্ত টেক্সটাইল ও মাগুরা টেক্সটাইল চালুর ব্যাপারে তিনবার আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করলেও কেউ অংশ নেয়নি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পিপিপিতে ঢাকার আহমেদ বাওয়ানী টেক্সটাইল মিলস হস্তান্তরের কার্যক্রম চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে। গাজীপুরে কাদেরিয়া টেক্সটাইল মিলের জমি ওরিয়ন-কাদেরিয়া টেক্সটাইলস লিমিটেডের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এছাড়া চট্টগ্রামের ভালিকা উলেন মিলস, সিলেট টেক্সটাইল মিলস এবং কুড়িগ্রাম টেক্সটাইল মিলস ইজারা পদ্ধতিতে পরিচালনার জন্য সরকার অনুমোদন দিয়েছে।
বিটিএমসি সূত্র জানিয়েছে, আরো ১০টি টেক্সটাইল মিলসকে পিপিপিতে আনার জন্য চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে— আমিন টেক্সটাইল, দ্য এশিয়াটিক টেক্সটাইল, জলিল টেক্সটাইল, বেঙ্গল টেক্সটাইল, সুন্দরবন টেক্সটাইল, দিনাজপুর টেক্সটাইল, টাঙ্গাইল টেক্সটাইল, দারোয়ানী টেক্সটাইল ও আফসার টেক্সটাইল।
স্বাধীনতার পর রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে জাতীয়করণ করা ৭৪টি বস্ত্রকল নিয়ে ১৯৭২ সালের ১ জুলাই থেকে যাত্রা শুরু করে বিটিএমসি।