অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধান নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের দুখতায় বাজিমাত বাংলাদেশের শ্রমবাজার। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ নোবেল জয়ী সুখ্যাতি ও সুনামকে কাজে লাগিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর মালয়েশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য এবং ইউরোপের শ্রমবাজারে ঝুলে থাকা সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নিয়েছেন। তাতে ফলও আসছে রাতারাতি।
দায়িত্ব নেওয়ার পরই আরব-আমিরাতে সাজাপ্রাপ্ত শ্রমিকদের মুক্তি, মালয়েশিয়াতে ভিসা জটিলতায় যেতে না পারা শ্রমিকদের পুনরায় পাঠানো এবং দুই বছর ধরে ইতালির ভিসার জন্য পাসপোর্ট জমাদানকারীদের দ্রুত ভিসা দেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া এবং প্রবাসী শ্রমিকদের ভিআইপি মযার্দা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। শেখ হাসিনার পতনের পর নতুন সরকার আসার পর রেমিটেন্সের পালেও হাওয়া লেগেছে। আর এটাই সম্ভব হয়েছে প্রধান উপদেষ্টার কল্যাণে। সবকিছুকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কূটনৈতিক সফলতা হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে দ-প্রাপ্তদের দ-মুক্ত করতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস। শপথ নেওয়ার পরদিনই তিনি আরব আমিরাতের সরকারের কাছে তিনি তাদের সাজামুক্তির আহ্বান জানান। এ ছাড়া ভিসা পাওয়ার পর সময়ের অভাবে বাংলাদেশের অন্যতম শ্রমবাজার মালয়েশিয়াতে চলতি বছর যেতে পারেনি বহু শ্রমিক। সহায় সম্বল হারিয়ে পথে বসে যান তারা। তাদের মধ্যে ১৮ হাজারের বেশি কর্মীকে দেশটিতে পাঠানোর বিষয়ে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের কাছ থেকে আশ্বাস আদায় করতে পেরেছেন ড. ইউনূস। এর পাশাপাশি ইতালির ভিসা প্রার্থীদের নিয়ে কিছুটা বিপাকে পড়েছে সরকার। কেননা, ঢাকার ইতালীয় দূতাবাসে দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকা ভিসা আবেদনকারীদের আবেদন সামলাতে হচ্ছে সরকারকে।
ঢাকার ইতালীয় দূতাবাসে বর্তমানে প্রায় ৪০ হাজারের বেশি কাজ সংক্রান্ত ভিসার আবেদন বিবেচনাধীন রয়েছে। দূতাবাসে ভিসা আবেদনকারীরা তাদের সমস্যা সমাধানে সরকারকে তাগাদা দিচ্ছেন। তারই অংশ হিসেবে মঙ্গলবার ইতালি ভিসা প্রার্থী প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা।
সম্প্রতি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, অনিষ্পন্ন ভিসার আবেদন দ্রুত সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তি করবে ঢাকার ইতালীয় দূতাবাস। আগামী দুই মাসের মধ্যে ২০ হাজার ভিসা আবেদনের সিদ্ধান্ত গ্রহণপূর্বক পাসপোর্ট ফেরত দেবে দূতাবাস। দূতাবাসে বর্তমানে প্রায় ৪০ হাজারের বেশি কাজ সংক্রান্ত ভিসার আবেদন বিবেচনাধীন।
ভাগ্য খুলছে ১৮ হাজার শ্রমিকের: বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ভিসা পাওয়ার পরও ১৮ হাজারের বেশি কর্মী মালয়েশিয়ায় যেতে পারেনি। মালয়েশিয়ায় যেতে না পারা এসব কর্মী প্রায় আশা ছেড়েই দিয়েছেন। সবকিছু হারিয়ে তারা এখন পথে বসে গেছেন। বেশ কিছুদিন ধরেই তারা মালয়েশিয়াতে যেতে সরকারের কাছে বারবার আহ্বান জানিয়ে এসেছে। হাসিনার পতনের দুই মাসের মাথায় তাদের জন্য সুখবর এলো মালয়েশিয়া থেকে। আর সেটা মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর মুখ থেকে।
সম্প্রতি ঢাকা সফরে এসে প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম আশ্বাস দিয়েছেন, বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে যেতে না পারা প্রায় ১৮ হাজার কর্মী দেশটিতে যাওয়ার সুযোগ পাবেন। আর এই আশ্বাস মিলেছে ড. ইউনূসের অনুরোধে।
মধ্যপ্রাচ্যের কর্মীরা ভিআইপির মর্যাদা পেতে যাচ্ছেন ॥ অন্তর্বর্তী সরকার মধ্যপ্রাচ্যগামী কর্মীদের জন্য ঢাকার বিমানবন্দরে বিশেষ লাউঞ্জ করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। চলতি মাস থেকে মধ্যপ্রাচ্যগামীদের জন্য বিমানবন্দরে বিশেষ লাউঞ্জ চালুর কথা রয়েছে। গত ৫ অক্টোবর প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় এক চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান উপদেষ্টা আসিফ নজরুল জানান, মধ্যপ্রাচ্যে যেসব শ্রমিক ভাই-বোন যাচ্ছেন তাদের জন্য বিমানবন্দরে আলাদা স্পেশাল লাউঞ্জের ব্যবস্থা করব। আমরা ইতোমধ্যে জায়গা ঠিক করেছি, সিভিল এভিয়েশনের সঙ্গে কথা হয়েছে। আশা করি দুই সপ্তাহের মধ্যে হয়ে যাবে।
উপদেষ্টা বলেন, লাউঞ্জ হলে প্রবাসী শ্রমিক ভাই-বোনদের যন্ত্রণা অনেক লাঘব হবে। এর পাশাপাশি অন্যান্য যে ভিআইপি সুবিধা সেগুলোও থাকবে। বিমানবন্দরে প্রবেশের মুহূর্ত থেকে প্লেনে ওঠার আগ পর্যন্ত যে লাউঞ্জ থাকে সেই পর্যন্ত প্রতিটি স্তরে তাদের সঙ্গে একজন লোক থাকবে সহায়তার জন্য।
প্রবাসীদের ভোগান্তি কমাতে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন বাতিল: দীর্ঘসূত্রতা কমাতে প্রবাসগামী কর্মীদের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন প্রক্রিয়া থেকে বের হতে চায় অন্তর্বর্তী সরকার। সে জন্য প্রবাসীদের শুধু সংশ্লিষ্ট দেশের দূতাবাস এবং জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) অনুমোদন নিতে হবে।
এ প্রসঙ্গে উপদেষ্টা আসিফ নজরুল জানান, প্রবাসীরা বিদেশে যেতে চাইলে তিনটা স্তরে অনুমোদন লাগত। একটা কনসার্ন দূতাবাসের, তারপরে মন্ত্রণালয়ের এবং বিএমইটির। এখন থেকে মন্ত্রণালয় আর কোনো ভূমিকা পালন করবে না। দুইটা জায়গায় অনুমোদন নিতে হবে।