দলবাজ’ ও ‘দুর্নীতিবাজ’ বিচারপতিদের পদত্যাগ অথবা তাঁদের অপসারণের দাবিতে হাইকোর্ট ঘেরাও এবং বিক্ষোভের ঘটনা ঘটেছে। বিক্ষোভের মুখে হাইকোর্ট বিভাগের ১২ জন বিচারপতিকে আপাতত বেঞ্চ না দেওয়া, অর্থাৎ বিচারকাজ থেকে বিরত রাখার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। তবে তারা বিচারপতিদের নাম প্রকাশ করেনি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, বৈষম্যবিরোধী আইনজীবী সমাজ ও জাতীয় নাগরিক কমিটি-লিগ্যাল উইং আলাদাভাবে গতকাল বুধবার সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ করে। এই কর্মসূচির ঘোষণা আগের দিন মঙ্গলবার দেওয়া হয়েছিল। গতকালের বিক্ষোভকালে এক হাজারের বেশি শিক্ষার্থী, আইনজীবী ও নাগরিক কমিটির লোকেরা উপস্থিত ছিলেন।
বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, দলবাজ ও দুর্নীতিবাজ বিচারপতিরা আওয়ামী লীগের ইচ্ছা ও নির্দেশনাকে আইনে পরিণত করেছিলেন। বিচারাঙ্গনকে দলীয়ভাবে ব্যবহারের জন্য আওয়ামী লীগ সরকার তাঁদের নিয়োগ দিয়েছিল। এই বিচারপতিদের দলবাজির কারণেই সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হাজারো ছাত্র-জনতাকে হত্যার সাহস দেখিয়েছেন। এই বিচারপতিরা ফ্যাসিস্টের দোসর।
বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আলোচনা শেষে বিকেল চারটার দিকে হাইকোর্টের বর্ধিত ভবনের সামনে এসে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল আজিজ আহমদ ভূঞা বলেন, আপাতত ১২ জন বিচারপতিকে কোনো বেঞ্চ দেওয়া হচ্ছে না। এর অর্থ হলো, অবকাশ শেষে ২০ অক্টোবর আদালত খুললে তাঁরা বিচারকাজে অংশ নিতে পারবেন না।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ১০ আগস্ট একইভাবে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ হয়েছিল। তখন পদত্যাগ করেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানসহ আপিল বিভাগের ছয় বিচারপতি। ওই দিনই বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদকে বাংলাদেশের ২৫তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। পরে আপিল বিভাগে আরও চারজনকে বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া হয়।
হাইকোর্ট বিভাগে বিচারপতির সংখ্যা ১০১। সরকার পতনের পর বিভিন্ন পক্ষ থেকে এই বিচারপতিদের অনেকের পদত্যাগের দাবি তোলা হচ্ছিল। সংখ্যাটি কখনো ২০, কখনো ২৫, কখনো ৩০ বলা হচ্ছিল। দাবি তোলা পক্ষগুলো কখনো আনুষ্ঠানিকভাবে বিচারপতিদের নামের তালিকা প্রকাশ করেনি, যাঁদের তারা পদত্যাগ চায়।
অবশ্য গতকাল সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ চলাকালে খবর ছড়ায় যে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ হাইকোর্ট বিভাগের ১২ জন বিচারপতিকে চায়ের দাওয়াত দিয়েছেন। পরে দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত আলাদাভাবে ছয়জন বিচারপতি প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তাঁরা হলেন বিচারপতি এস এম মনিরুজ্জামান, বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামান, বিচারপতি শাহেদ নূরউদ্দিন, বিচারপতি মো. আখতারুজ্জামান, বিচারপতি মো. আমিনুল ইসলাম ও বিচারপতি এস এম মাসুদ হোসাইন দোলন।
সাক্ষাৎ শেষে বেরিয়ে যাওয়ার সময় একাধিক বিচারপতির সঙ্গে সাংবাদিকেরা কথা বলার চেষ্টা করেন। তবে তাঁরা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। দুজন আগামী ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত ছুটি নেওয়ার কথা জানিয়েছেন। দুজন বিচারপতি ছুটি নেওয়ার কথা জানালেও সময়সীমা উল্লেখ করেননি।
আইনজীবী ও বিচারালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলোর ভাষ্য অনুসারে, যে ১২ জন বিচারপতিকে আপাতত বেঞ্চ দেওয়া হবে না, তাঁদের মধ্যে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করা ছয়জনের নাম থাকতে পারে। বাকি ছয়জনের মধ্যে থাকতে পারেন বিচারপতি আতাউর রহমান খান, বিচারপতি নাইমা হায়দার, বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ, বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকার, বিচারপতি আশীষ রঞ্জন দাস ও বিচারপতি খিজির হায়াত।
সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন বলছে, কোন কোন বিচারপতিকে বেঞ্চ দেওয়া হয়নি, তা আদালত খোলার পরই দেখা যাবে। উল্লেখ্য, বেঞ্চ না দিলে বিচারপতিরা বিচারকাজে অংশ নিতে পারেন না।