Search
Close this search box.
Search
Close this search box.
প্রসাধনী সামগ্রী আমদানি
প্রসাধনী সামগ্রী আমদানি

স্টাফ রিপোর্টার। সম্প্রতি  বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন একটি প্রতিবেদন করেছে লিপস্টিক ও অন্যান্য প্রসাধনী সামগ্রীর আমদানি ও করের উপরে। যেখানে একটি লিপস্টিক আমদানিতে শুল্ককর দিতে হয় প্রায় ২৩ টাকা, সেখানে দেশে উৎপাদন করলে প্রতি পিসে রাজস্ব দিতে হয় প্রায় ৪০৪ টাকা। ফলে দেশীয় উদ্যোক্তারা বিনিয়োগে উৎসাহ পাচ্ছেন না। এখানেই শেষ নয়, নামমাত্র মূল্যে আমদানি হয় লিপস্টিকসহ কালার কসমেটিকস ও স্কিন কেয়ার প্রসাধনী সামগ্রী। আবার চাহিদার অর্ধেকের বেশি আসে লাগেজ বা চোরাপথে। ফলে এ খাত থেকে সরকার সঠিক রাজস্ব পাচ্ছে না। হিসাব অনুযায়ী, দেশে প্রায় ৩৪ হাজার কোটি টাকার কালার কসমেটিকস ও স্কিন কেয়ার পণ্যের বাজার। আমদানিনির্ভরতা কমিয়ে সঠিকভাবে রাজস্ব আদায় করতে হলে আমদানিতে রাজস্ব বৃদ্ধি করতে হবে। একইসঙ্গে স্থানীয় উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগ সুরক্ষায় রাজস্ব কমাতে হবে।

প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন বলছে, বাজারে বিদেশি একটি লিপস্টিক ২০০ থেকে এক হাজার টাকায় বিক্রি হয়। অথচ আমদানির সময় আন্ডার ইনভয়েসিং করে একই পণ্যের ট্যারিফ ভ্যালু দেখানো হয় মাত্র চার থেকে সাড়ে চার টাকা। শুল্কারোপের পর সেসব লিপস্টিকের দাম দাঁড়ায় ১০ থেকে ১১ টাকা। কালার কসমেটিকস ও স্কিন কেয়ার পণ্য আমদানিতে আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে ফাঁকি দেয়া হচ্ছে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব, করা হচ্ছে অস্বাভাবিক মুনাফা। স্থানীয় বাজারের যে পরিধি তা বিবেচনায় আমদানি পর্যায়ে সরকারের রাজস্বের পরিমাণ নগণ্য বলে মনে করে কমিশন। ট্যারিফ কমিশন কালার কসমেটিকস ও স্কিন কেয়ার পণ্যের মধ্যে লিপস্টিকের উৎপাদন, আমদানি ও রাজস্ব নিয়ে বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদন তৈরি করেছে।

chardike-ad

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কালার কসমেটিকস শ্রেণির একটি পণ্য হলো লিপস্টিক। দেশে ‘সাধারণ মানসম্পন্ন’ ও ‘উচ্চমানসম্পন্ন’ এ দুই ধরনের লিপস্টিক আমদানি হয়। এছাড়া সাধারণ মানসম্পন্ন ও উচ্চমানসম্পন্ন এ দুই ধরনের লিপস্টিক উৎপাদিত হয়। বাণিজ্যিকভাবে আমদানি করা ও স্থানীয়ভাবে উৎপাদন করা সাধারণ মানসম্পন্ন লিপস্টিকের খরচ ও রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে। হিসাব অনুযায়ী, বাণিজ্যিকভাবে আমদানি করা সাধারণ মানসম্পন্ন এক পিস লিপস্টিকের ওজন তিন দশমিক ৭০ গ্রাম। আর একই মানের স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত এক পিস লিপস্টিকের ওজন তিন দশমিক ৯০ গ্রাম। আমদানি করা এক কেজি ওজনে লিপস্টিকের সংখ্যা দাঁড়ায় ২৭০ পিস, আর উৎপাদনে ২৫৬ পিস। আমদানি করা প্রতি পিস লিপস্টিকের শুল্কায়নযোগ্য মূল্য ১১ টাকা ৪২ পয়সা। আর স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত প্রতি পিসের উৎপাদন মূল্য ৪৩ টাকা ৪৭ পয়সা।

হিসাবে আরও দেখা গেছে, আমদানি করা ও স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত প্রতি পিস লিপস্টিকের সরবরাহ মূল্য দাঁড়ায় ১৮৬ টাকা ৭৬ পয়সা। একইভাবে আমদানি করা ও স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত প্রতি পিস লিপস্টিকের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য দাঁড়ায় ৩৫০ টাকা। এক্ষেত্রে আমদানি করা ও স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত প্রতি পিস লিপস্টিকের সরবরাহ মূল্য ও সর্বোচ্চ মূল্য একই। আবার আমদানি করা প্রতি পিস লিপস্টিকের ওপর সম্পূরক শুল্ক দুই টাকা ৯০ পয়সা। আর স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত প্রতি পিস লিপস্টিকের ওপর সম্পূরক শুল্ক ১৮ টাকা ৬৮ পয়সা। সাধারণ মানের এক পিস লিপস্টিক আমদানিতে রাজস্ব দিতে হয় ১৩ টাকা ৬৪ পয়সা। আর স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত প্রতি পিস লিপস্টিকে রাজস্ব দিতে হয় ৪৯ টাকা ৪৯ পয়সা। অর্থাৎ এক পিস লিপস্টিক আমদানিতে সাত শতাংশ রাজস্ব দিতে হয়, আর উৎপাদনে প্রতি পিস লিপস্টিকে আমদানির তুলনায় ২৭ শতাংশ বেশি রাজস্ব দিতে হয়।

অপরদিকে বাণিজ্যিকভাবে আমদানি করা ও স্থানীয়ভাবে উৎপাদন করা ‘উচ্চ মানসম্পন্ন’ লিপস্টিকের খরচ ও রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে। হিসাব অনুযায়ী, বাণিজ্যিকভাবে আমদানি করা উচ্চ মানসম্পন্ন এক পিস লিপস্টিকের ওজন তিন দশমিক ৭০ গ্রাম। একই মানের স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত এক পিস লিপস্টিকের ওজন চার গ্রাম। আমদানি করা এক কেজি ওজনে লিপস্টিকের সংখ্যা দাঁড়ায় ২৭০ পিস, আর উৎপাদনে ২৫০ পিস। আমদানি করা প্রতিটি লিপস্টিকের শুল্কায়নযোগ্য মূল্য ২২ টাকা ৮৫ পয়সা বা ২৩ টাকা। আর স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত প্রতিটির উৎপাদন মূল্য ৪০৪ টাকা ২৩ পয়সা।

হিসাবে আরও দেখা গেছে, আমদানি করা ও স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত প্রতিটি লিপস্টিকের সরবরাহ মূল্য দাঁড়ায় ৮২৭ টাকা শূন্য ৮ পয়সা। একইভাবে আমদানি করা ও স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত প্রতিটি লিপস্টিকের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য দাঁড়ায় এক হাজার ৫৫০ টাকা। এক্ষেত্রে আমদানি করা ও স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত প্রতি পিস লিপস্টিকের সরবরাহ মূল্য ও সর্বোচ্চ মূল্য একই। আবার আমদানি করা প্রতি পিস লিপস্টিকের উপর সম্পূরক শুল্ক পাঁচ টাকা ৮০ পয়সা। আর স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত প্রতিটি লিপস্টিকের ওপর সম্পূরক শুল্ক ৮২ টাকা ৭১ পয়সা। ‘উচ্চমান সম্পন্ন’ একটি লিপস্টিক আমদানিতে রাজস্ব দিতে হয় ৪৯ টাকা ৯৬ পয়সা। আর স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত প্রতিটি লিপস্টিকে রাজস্ব দিতে হয় ২১৯ টাকা ১৮ পয়সা। অর্থাৎ এক পিস লিপস্টিক আমদানিতে ছয় শতাংশ রাজস্ব দিতে হয়, আর উৎপাদনে প্রতি পিস লিপস্টিকে আমদানির তুলনায় ২৭ শতাংশ বেশি রাজস্ব দিতে হয়।

এই বিষয়ে এনবিআরের এক কর্মকর্তা বলেন, ট্যারিফ কমিশনের দেয়া হিসাব পর্যালোচনা করা হচ্ছে। এনবিআর সব সময় উদ্যোক্তাদের পক্ষে থাকে। দেশে এই শিল্প গড়ে উঠতে বিষয়টি নিয়ে কাজ করা হবে।

ট্যারিফ কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্কিন কেয়ার ও কালার কসমেটিকসের মধ্যে রয়েছে ওষ্ঠাধার প্রসাধনী সামগ্রী, চক্ষু প্রসাধনী সামগ্রী, হাত, নখ ও পায়ের প্রসাধনী সামগ্রী, পাউডার। এছাড়া রয়েছে পেট্রোলিয়াম জেলি, বেবি লোশন, সুগন্ধি বাথ সল্ট ও অন্য গোসল সামগ্রী। দেশে কালার কসমেটিকস ও স্কিন কেয়ার পণ্যের বাজার নিয়ে কোনো গবেষণা নেই। তবে স্টাটিস্টা ও এলিয়েড মার্কেট রিসার্চের হিসাব অনুযায়ী, দেশে ২০২০ সালে কালার কসমেটিকস ও স্কিন কেয়ারের বাজার ছিল প্রায় সাড়ে ২১ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে কালার কসমেটিকসের বাজার প্রায় আট হাজার ৬০০ কোটি টাকা এবং স্কিন কেয়ারের বাজার প্রায় ১১ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। ২০২৩ সালে এই বাজার দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩৪ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে কালার কসমেটিকস প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা ও স্কিন কেয়ার প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকা।

আরও বলা হয়েছে, ২০২০-২১ অর্থবছর ৫২৮ কোটি টাকার কালার কসমেটিকস ও স্কিন কেয়ার পণ্য আমদানি হয়েছে, যাতে ২৪২ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় হয়েছে। এছাড়া ২০২১-২২ অর্থবছর ৬২৭ কোটি টাকার পণ্য আমদানি হয়েছে, যাতে রাজস্ব আদায় হয়েছে ২৮৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ আমদানি ছাড়া বাজারের চাহিদার বাকি পণ্য চোরাপথে আমদানি হয়েছে এবং নকল পণ্য বাজারে ঢুকেছে।

বাংলা টেলিগ্রাফ/শেয়ারবীজ