Search
Close this search box.
Search
Close this search box.
বুন্দেসলিগার ২০২৩-২৪ মৌসুমের চ্যাম্পিয়ন বায়ার লেভারকুসেন।

ইউরোপীয় ফুটবলের শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই বুন্দেসলিগায় বায়ার্ন মিউনিখের একচ্ছত্র আধিপত্য সম্পর্কে জানেন না এমন মানুষ খুব কমই আছেন। বিশেষ করে বায়ার্ন মিউনিখের ম্যাচ যখনই হয় তখন যেন টানটান উত্তেজনা, চোখেমুখে হাজারো আশা নিয়ে বসেন ফুটবল ভক্তরা। কিন্তু এবার বায়ার্ন মিউনিখের সেই আধিপত্যেই শক্ত ভাঙন ধরালো বায়ার লেভারকুসেন। ক্লাবটির ১২০ বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো শিরোপা জয়ের উৎসবের সাক্ষী হলো তাঁদের ঘরের মাঠ বে অ্যারেনা এবং লক্ষ লক্ষ সমর্থক। এর আগে একবার, দুইবার নয়, টানা পাঁচবার শিরোপার কাছে গিয়েও তা ছুঁয়ে দেখা হয়নি জাভি আলোনসোর শিষ্যদের। অবশেষে সেই আক্ষেপের অবসান ঘটিয়ে বহুল কাঙ্ক্ষিত ট্রফি উঁচিয়ে ধরলো লুকাস রাদেকির দল। ফাইনালে জার্মান ক্লাব ভেরডার ব্রেমেনকে ৫-০ গোলের বিশাল ব্যবধানে বিধ্বস্ত করেছে তাঁরা।

এই জয়ের মাধ্যমে ২৯ ম্যাচে ৭৯ পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে অবস্থান করছে লেভারকুসেন। অন্যদিকে সমসংখ্যক ম্যাচ খেলে ৬৩ পয়েন্ট নিয়ে তালিকার দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে বায়ার্ন মিউনিখ। দুই দলের ব্যবধান ১৬ পয়েন্ট হওয়ায় পরের ম্যাচে হারলেও শীর্ষ স্থানেই থাকবে দ্য ইলেভেন অব দ্য কোম্পানি।

chardike-ad

ঘরের মাঠ বে অ্যারেনায় খেলতে নেমে শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক হয়ে খেলতে থাকে লেভারকুসেন। এর সুফল পেতে তাঁদের বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি। ম্যাচের ২৫ মিনিটে ভিক্টর বোনিফেসের পেনাল্টি থেকে করা গোলে উল্লাসে মাতেন কালো-লাল জার্সিধারী সমর্থকরা। অবশ্য রেফারি সরাসরি পেনাল্টির নির্দেশ দিলেও পরবর্তীতে ভিএআর (ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি) পরীক্ষা করে তা নিশ্চিত হতে হয়েছে।

১-০ ব্যবধান ধরে রেখে প্রথমার্ধ শেষ করে লেভারকুসেন। বিরতির পর লেভারকুসেনের মতোই কিছুটা আক্রমণাত্মক মেজাজে খেলতে শুরু করে ব্রেমেন। কিন্তু তাঁদের সেই মনোভাবে চিড় ধরে দ্বিতীয়ার্ধের ৬০ মিনিটে। সুইস মিডফিল্ডার গ্রানিত জাকার দুর্দান্ত এক গোলে শিরোপার আরো কাছে পৌঁছে যায় রাদেকির দল। এর আগে গ্রানিত জাকা লেভারকুসেনে এসেছিলেন ব্যাপক আলোচনা-বিতর্ক নিয়ে। ইংলিশ ক্লাব আর্সেনালের সমর্থকদের কাছে রীতিমতো চক্ষুশূল হয়েছিলেন এই মিডফিল্ডার। কিন্তু আজ লেভারকুসেনের জার্সি গায়ে যেন নিজের ফুটবলীয় প্রতিভার সবটুকু উজাড় করে দিলেন তিনি। জাকার গোলটি ব্রেমেনের কফিনে যেন আরেকটি পেরেক ঠোকার মতোই কাজ করেছিলো।

ম্যাচ শেষ হওয়ার অল্প কিছু আগে আমিনে আদিলের পরিবর্তে ফ্লোরিয়ান ভির্টজকে মাঠে নামান আলোন্সো। এরপরের বাকি সময় যেন রূপকথার মতোই উদযাপন করেছেন লেভারকুসেনের সমর্থকরা। ৬৮ মিনিটে ভির্টজ দলের পক্ষে তৃতীয় এবং ব্যক্তিগত প্রথম গোল করতেই সমর্থকদের আনন্দ যেন বাঁধভাঙা উল্লাসে রূপ নিলো। ৮৪ মিনিটে দলের পক্ষে চতুর্থ এবং ব্যক্তিগত দ্বিতীয় গোলের পরপরই স্টেডিয়ামের গ্যালারি টপকে নেমে পড়েন কিছু সমর্থক। বলতে গেলে ট্রফি জয়ের ক্ষুধায় যেন তর সইছিলো না তাঁদের।

৮৪ মিনিটে গোলের পরেই গ্যালারি টপকে নামছেন লেভারকুসেন সমর্থকরা। সূত্র: রয়টার্স।

পরে রেফারি একরকম বাধ্য হয়েই ম্যাচ বন্ধ রাখেন বেশ কিছুক্ষণ। এরপর ম্যাচের শেষ মুহূর্তে ৮৯ মিনিটে এলো জয়সূচক সর্বশেষ গোল। যার অপেক্ষায় ছিলো লক্ষ লক্ষ সমর্থক। এবারো গোল করলেন সেই ভির্টজই, পূরণ করলেন হ্যাটট্রিক। যা ছিলো ব্রেমেনের কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দেওয়ার শামিল। এরই মধ্যে সমর্থকরা গ্যালারি টপকে মাঠে ঢুকতে শুরু করেছেন। অবশ্য প্রিয় দলের জয় উদযাপনের জন্য সমর্থকরা এমন পাগলামি তো করতেই পারেন। শুধু তখন রেফারির শেষ বাঁশি বাজানোর অপেক্ষাটুকুই আছে! কিছুক্ষণ পরেই অবসান হয় সেই অপেক্ষার। ব্যস! তখন লেভারকুসেনকে আর পায় কে! রেফারির শেষ বাঁশিই অবসান ঘটালো বায়ার্ন মিউনিখের ১১ বছরের রাজত্বের।

চলতি মৌসুমের আগে ১৯৯৬-৯৭ থেকে পরের ছয় মৌসুম পর্যন্ত লেভারকুসেনের স্বর্ণালি সময় ছিলো। এই সময়গুলোতে তাঁরা চারবার রানার্স আপ হয়। একবার তাঁরা রানার্স আপ হয়েছিলো জার্মান কাপেও। এরপর চ্যাম্পিয়ন্স লিগে রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে ফাইনালে উঠে শিরোপার খুব কাছে গিয়েও আর তা ছুঁয়ে দেখা হয়নি তাঁদের। এজন্য একবার দলের নাম কৌতুক করে দেওয়া হয় “নেভারকুজেন”, যার মানে হলো যাদেরকে দ্বারা কখনোই সম্ভব নয়।

কিন্তু আজ সেই নামের দুঃখ ঘুচিয়ে শিরোপা জয়ের আনন্দে মাতলো জাভি আলোন্সো বাহিনী। ক্লাবের ১২০ বছরের ইতিহাসের সেরা সাফল্য এলো তাঁদের হাতে। ২০২২ সালের অক্টোবরে আলোন্সো ক্লাবের দায়িত্ব নেওয়ার আগ পর্যন্ত লেভারকুসেন বুন্দেসলিগার পয়েন্ট টেবিলের ১৭তম অবস্থানে ছিলো। আলোন্সোর কাছে সেটাই ছিলো প্রথম শ্রেণির কোনো ক্লাবের দায়িত্ব গ্রহণ করা। তাঁর কোচিং অভিজ্ঞতা বলতে গেলে ছিলো স্প্যানিশ ক্লাব রিয়াল সোসিয়েদাদের “বি” টিমের হয়ে তিন বছরের কাজ। ব্যস এতোটুকুই। সেই জাভির কোচিংয়ের বদৌলতে রেলিগেশনের শঙ্কা পেছনে ফেলে ২০২২-২৩ মৌসুম ষষ্ঠ স্থানে থেকে শেষ করে লেভারকুসেন।

এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁদের। তাঁরা একের পর এক ম্যাচ জয়লাভ করে, নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করে মুগ্ধ করেন সমর্থকদের। আলোন্সোর কোচিং দক্ষতায়‌ বুন্দেসলিগায় লেভারকুসেন হয়ে ওঠে অপ্রতিরোধ্য ও অজেয়। আর তাই আজ পাঁচ ম্যাচ বাকি থাকতেই বহু আরাধ্য ট্রফি জয়ের আনন্দে মাতে লেভারকুসেন।