কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে স্মরণকালের বৃহত্তম ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। অনুকূল আবহাওয়া বিরাজ করায় ভোর থেকেই কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে ওঠে ঈদগাহ ময়দান। উপমহাদেশের অন্যতম বৃহত্তম ও প্রাচীন এই ঈদগাহে এ বছর ১৯৭তম ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আজ (১১ এপ্রিল) সকাল দশটায় শুরু হয় ঈদ জামাত। রীতি অনুযায়ী নামাজ শুরুর আগে তিনবার শর্টগানের গুলি ছোঁড়া হয়। কিশোরগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ শর্টগানের গুলি ছুঁড়ে নামাজ শুরুর ঘোষণা প্রদান করেন। সকাল সাড়ে নয়টার আগেই রীতিমতো ভরপুর হয়ে ওঠে ঈদগাহ প্রাঙ্গণ।
এরপরও দলে দলে মুসল্লি আসতে থাকেন। মাঠের ভিতরে জায়গা না পেয়ে অসংখ্য মুসল্লি পাশের সড়ক, সেতু, বহুতল বিল্ডিংয়ের ছাদসহ অলি গলিতে নামাজ আদায় করেন।
প্রতিবারের ন্যায় এবারও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মুসল্লিরা শোলাকিয়ায় এসেছেন। দূরের মুসল্লিরা ঈদের দু-একদিন আগেই এসে অবস্থান নেন শোলাকিয়া ঈদগাহের মিম্বর, আশেপাশের বিভিন্ন মসজিদ, হোটেল এবং আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে। দূরের যারা ঈদগাহের মিম্বরে এসে অবস্থান নেন, তাদের ঈদের আগের দিন ইফতার ও রাতের খাবারের ব্যবস্থা করে কিশোরগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি।
নামাজ শেষে দেশ ও জাতির কল্যাণ কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। এছাড়াও মোনাজাতে বিশ্বের মুসলিম উম্মাহর শান্তি ও সমৃদ্ধি এবং ফিলিস্তিন সহ সারাবিশ্বে নির্যাতিত-নিপীড়িত মুসলিমদের কথাও স্মরণ করা হয়। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ঈদ জামাত অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে আগে থেকেই কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করে প্রশাসন।
নির্বিঘ্নে ঈদ জামাত সম্পন্ন করতে শোলাকিয়া ঈদগাহে চার স্তরের নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়। ঈদ জামাত সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে ড্রোন ক্যামেরা, বাইনোকুলারসহ পাঁচ প্লাটুন বিজিবি, র্যাব, দেড় হাজার পুলিশসহ অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য মোতায়েন করা হয়। মাঠে ছয়টি ওয়াচ টাওয়ার এবং সিসি ক্যামেরা দ্বারা পুরো মাঠ মনিটরিং করা হয়। প্রতিটি মুসল্লিকে তল্লাশি করে মাঠে প্রবেশ করানো হয়।
জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলায় এ্যাম্বুলেন্সসহ মেডিকেল টিম এবং ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট সার্বক্ষণিক মোতায়েন ছিল। বম্ব ডিসপোজাল ইউনিট সহ পুলিশের কুইক রেসপন্স টিম বা কিউআরটিও প্রস্তুত রাখা হয়। এছাড়াও স্কাউট সদস্যরা স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
দূরের মুসল্লিদের সুবিধার্থে ঈদের দিন ময়মনসিংহ থেকে কিশোরগঞ্জ এবং ভৈরব থেকে কিশোরগঞ্জ রুটে শোলাকিয়া এক্সপ্রেস নামে দুটি স্পেশাল ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়। কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ জানান, এবার স্মরণকালের বৃহত্তম ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে শোলাকিয়ায়।