প্রায় দেড় মাসের হাড্ডা-হাড্ডি লড়াই শেষে আজ পর্দা নামছে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ-বিপিএলের দশম আসরের। সুপার ফ্রাইডেতে বিপিএলের দশম আসরের শিরোপা কার হাতে উঠছে? সব প্রশ্নের উত্তর মিলবে আজ রাতেই। মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে বিপিএলের ফাইনালে মুখোমুখি হচ্ছে লিটন দাসের কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স আর তামিম ইকবালের ফরচুন বরিশাল।
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) সর্বোচ্চ ৪বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। তার মধ্যে সর্বশেষ দুই আসরে টানা শিরোপা জয়ের স্বাদ পেয়েছে ভিক্টোরিয়ান্সরা। এবার তাদের সামনে হ্যাটট্রিক শিরোপার হাতছানি। অন্যদিকে সবমিলিয়ে ৩বার ফাইনাল খেলেও ট্রফি ছুঁয়ে দেখা হয়নি বরিশালের। বর্তমান ফ্যাঞ্চাইজির অধীনে অবশ্য এর আগে একবারই ফাইনাল খেলেছে তারা। তাই ফরচুন বরিশালের সামনে প্রথমবার চ্যাম্পিয়নের স্বাদ পাবার সুযোগ।
দুর্দান্ত ঢাকার বিপক্ষে হেরে আসর শুরু করেছিল কুমিল্লা। প্রথম ৪ ম্যাচে তাদের নামের পাশে ছিল ৪ পয়েন্ট। তখন কোয়ালিফাই নিয়েই শঙ্কা ছিল লিটন দাসের দলের। তবে এরপর দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ায় তারা। টানা ৫ জয়ে ৯ ম্যাচে ১৪ পয়েন্ট নিয়ে পরের রাউন্ডে এক পা দিয়ে রাখে কুমিল্লা।
শেষ পর্যন্ত ১২ ম্যাচে ১৬ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের দ্বিতীয় দল হিসেবে কোয়ালিফায়ার নিশ্চিত করে তারা। প্রথম কোয়ালিফায়ারে টেবিল টপার রংপুর রাইডার্সকে রীতিমতো উড়িয়ে দিয়ে প্রথম সুযোগেই ফাইনাল নিশ্চিত করে কুমিল্লা।
এটা কুমিল্লার পঞ্চম ফাইনাল। এর আগে চার বার ফাইনাল খেলে চারবারই শিরোপা জিতেছে। অর্থাৎ ফাইনালে হারের রেকর্ড নেই তাদের। অতীত পরিসংখ্যানের মতোই এবারের ফাইনালেও প্রতিপক্ষের বড় পরীক্ষা নিতে পারে কুমিল্লা।
দলটার প্রধান শক্তির জায়গা ব্যাটিং অর্ডারে বেশ কয়েকজন হার্ডহিটার। ওপেনিংয়ে লিটন দাসের সঙ্গী হতে পারেন সুনীল নারিন। মূলত লিটনের ওপরই থাকবে দলকে শক্ত ভিত গড়ে দেবার দায়িত্ব। এই অভিজ্ঞ ওপেনার সাম্প্রতিক সময়ে ফর্মেও আছেন। সবমিলিয়ে অধিনায়ককে ব্যাট হাতেও দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে হবে। তার সঙ্গী নারিন অনেকটা ‘ফ্রি’ উইকেট। তিনি কিছু রান করে দিলে সেটা হবে বোনাস।
তিনে খেলবেন ইনফর্ম তাওহীদ হৃদয়। এই তরুণ ব্যাটার হতে পারেন লিটনের ট্রাম্পকার্ড। মিডল অর্ডারে দেখা যেতে পারে জনসন চার্লস, মঈন আলী আন্দ্রে রাসেলদের। এই তিনজনই হার্ডহিটার। নিজেদের দিনে একাই ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারেন। লোয়ার মিডল অর্ডারে দেখা যাবে মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন ও জাকের আলী অনিককে।
স্পিনে দলটার নেতৃত্ব দেবেন তানভীর ইসলাম। এই অফ স্পিনারকে প্রয়োজনে সঙ্গ দেবেন মঈন আলী। পেস বোলিংয়ে দলটার কিছুটা ঘাটতি আছে। চোট থেকে ফিরে খেলতে পারেন মুস্তাফিজ। তার সঙ্গে দেখা যেতে পারে মুশফিক হাসানকে। আর রাসেলের মিডিয়াম পেসেরও সার্ভিস পাবে ভিক্টোরিয়ান্সরা।
অন্যদিকে প্রথমবার শিরোপা জয়ের মিশনে থাকা বরিশালের ফাইনালে আসার রাস্তাটা খুব একটা প্রশস্ত ছিল না। গ্রুপ পর্বে ১২ ম্যাচে ১৪ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় হয়ে কোয়ালিফাই করে তারা। এলিমিনেটরে চট্টগ্রামকে উড়িয়ে তাদের নতুন যাত্রা শুরু হয়। এরপর কোয়ালিফায়ারেও রংপুরের বিপক্ষে সহজেই জয় পায় তামিম ইকবালের দল।
ফাইনালে দলটার সবচেয়ে বড় পুঁজি অভিজ্ঞতা। জাতীয় দলের একাধিক অভিজ্ঞ ক্রিকেটার আছেন বরিশাল শিবিরে। ওপেনিংয়ে তামিম ইকবালের সঙ্গে দেখা যেতে পারে কাইল মেয়ার্সকে। দুইজনই দুর্দান্ত ফর্মে আছেন। তিনে খেলবেন সৌম্য সরকার। এই বাঁহাতি ব্যাটারও আসর জুড়ে দলের প্রয়োজন বুঝে ঠাণ্ডা মাথায় খেলেছেন। সবমিলিয়ে দলটার টপ অর্ডার নিশ্চিতভাবেই স্বস্তি দিচ্ছে টিম ম্যানেজমেন্টকে।
চারে দেখা যাবে অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিমকে। পাঁচে আছেন ডেভিড মিলার। এই প্রোটিয়া ব্যাটার হতে পারেন ট্রাম্পকার্ড। মিডল অর্ডারে আরেক ভরসার নাম মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। এই তিন অভিজ্ঞ ক্রিকেটার মিডল অর্ডারকে মজবুত করেছে।
ফিনিশিংয়ে মেহেদি হাসান মিরাজ কিংবা মোহাম্মদ সাইফুদ্দিনরা নিজেদের সামর্থ্যের প্রামণ দিয়েছেন। তাছাড়া জেমস ফুলার ওবেদ ম্যাকয়রাও ব্যাট চালাতে পারেন। সবমিলিয়ে লম্বা ব্যাটিং লাইন আপ তাদের।
দলটার স্পিন বিভাগের নেতৃত্বে থাকবেন তাইজুল ইসলাম। তার সঙ্গে আছেন মেহেদি মিরাজ। আর পেস বিভাগে ওবেদ ম্যাকয়, ফুলার, সাইফুদ্দিনদের সঙ্গে আছেন মেয়ার্সও।
শুক্রবার (১ মার্চ) মিরপুরের শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে শিরোপার লড়াইয়ে ফরচুন বরিশালের প্রতিপক্ষ কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টায় ম্যাচটি মাঠে গড়াবে।