Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

বিশ্বনন্দিত বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং এর নাম আমরা সবাই জানি। আমাদের মধ্যে অনেকেই অধ্যাপক জামাল নজরুল ইসলামের নাম জানিনা, কখনো শুনিওনি। অথচ হকিং এর কাছের বন্ধু জামাল নজরুল ইসলামের আপেক্ষিকতার তত্ত্ব, কোয়ান্টাম মেকানিক্স, কসমোলজি ও মহাবিশ্বের সৃষ্টি তত্ত্বের মতো জটিল বিষয় নিয়ে রয়েছে অসংখ্য মৌলিক গবেষণা।

অধ্যাপক জামাল নজরুল ইসলামের জন্ম ঝিনাইদহে, ১৯৩৯ সালে। তার পৈতৃক জন্মস্থান ও পূর্ব পুরুষের আবাসস্থল চট্টগ্রাম জেলার ফটিকছড়ি উপজেলায়। নজরুল ইসলামের বাবা সিরাজুল ইসলাম খান ছিল তৎকালীন ঝিনাইদহ মহকুমার মন্সেফ। বাবার কর্মসূত্রেই জামাল নজরুল ইসলামের জন্ম ও শৈশবের খুব ক্ষুদ্র একটা অংশ কাটে ঝিনাইদহে।

chardike-ad

জামাল নজরুল ইসলামের শিক্ষাজীবন ছিল বৈচিত্র্যময়। ব্রিটিশ ভারতের নানা প্রান্তে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা লাভ করেন। বাবার বদলির সুবাদে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার শুরুটা হয় কলকাতার মডেল স্কুলে। এরপর শিশু বিদ্যাপীঠে কিছুকাল পড়লেও আবার ফিরে আসেন কলকাতা মডেল স্কুলে। চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলে ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন। সেখান থেকে তৎকালীন ব্রিটিশ পাকিস্তানের লাহোরের বিখ্যাত লরেন্স কলেজ থেকে ও-লেভেল ও এ-লেভেল পাশ করেন। কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে বিএসসি ডিগ্রি নেয়ার পর যুক্তরাজ্যের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রায়োগিক গণিত ও তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। খুব কম বয়সে পিএইচডি ডিগ্রিটাও অর্জন করেন ক্যামব্রিজ থেকে। একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অত্যন্ত সম্মানের ও বিরল ডক্টর অব সায়েন্স (ডিএসসি) ডিগ্রি অর্জন করেন।

কর্মজীবনে জামাল নজরুল ইসলাম ১৯৬৩ থেকে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অফ মেরিল্যান্ডে ডক্টরাল-উত্তর ফেলো হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ইসলাম কেমব্রিজের ইনস্টিটিউট অফ থিওরেটিক্যাল অ্যাস্ট্রোনমি-তে (বর্তমানে ইনস্টিটিউট অফ অ্যাস্ট্রোনমি) কাজ করেন ১৯৬৭ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত। ১৯৭১ থেকে ১৯৭২ পর্যন্ত ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজিতে ভিজিটিং সহযোগী হিসেবে কাজ করেন। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ে জ্যেষ্ঠ গবেষণা সহযোগী হিসেবে কাজ করেন। ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত তিনি লন্ডনের কিংস কলেজে ফলিত গণিতের প্রভাষক ছিলেন। ১৯৭৫ থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত ইউনিভার্সিটি কলেজ, কার্ডিফ (বর্তমানে কার্ডিফ বিশ্ববিদ্যালয়) এর সায়েন্স রিসার্চ কাউন্সিলে ফেলো ছিলেন। ১৯৭৮ সালে তিনি লন্ডনের সিটি ইউনিভার্সিটিতে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন।

১৯৮৪ সালে স্ত্রী কন্যাসহ স্থায়ীভাবে চট্টগ্রামে ফিরে আসেন অধ্যাপক নজরুল। মাত্র তিন হাজার টাকা বেতনে যোগ দেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগে। ১৯৮৪ থেকে ১৯৮৯ পর্যন্ত এখানেই শিক্ষকতা করেন। ১৮৮৯ সালে তিনি গাণিতিক ও ভৌত বিজ্ঞানের গবেষণা কেন্দ্র (RCMPS) প্রতিষ্ঠা করেন এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৬ সালে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক হন এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এই পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন।

নজরুল ইসলামের সবচেয়ে বিখ্যাত বই ’দি আল্টিমেট ফেইট অফ দি ইউনিভাস’। বইটি ১৯৮৩ সালে ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস থেকে প্রকাশিত হয়। বইটি অক্সফোর্ড এবং কেমব্রিজের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর বই পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত। আর বাংলায় নজরুল ইসলামের সবচেয়ে বিখ্যাত বই বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত ‘ব্ল্যাক হোল’ বইটি।

জীবনব্যাপি নানা পুরস্কারে সম্মানিত হন নজরুল ইসলাম। ১৯৮৫ সালে বাংলাদেশ একাডেমি অফ সায়েন্সেস ফর ফিজিক্যাল সায়েন্সেস (সিনিয়র গ্রুপ) এর স্বর্ণপদক, ১৯৯৮ সালে জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি পদক এবং অ্যাকাডেমিয়া নাজিওনাল ডেলে সায়েন্স থেকে মেডেল লেকচার পুরস্কার, ২০০০ সালে তিনি বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ’একুশে পদক’ ও ২০১১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিজ্ঞানে রাজ্জাক-শামসুন লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড পান।

৭৪ বছর বয়সে ২০১৩ সালের ১৬ই মার্চ চট্টগ্রামের একটি হাসপাতালে এই মহান বিজ্ঞানী শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।