দক্ষিণ কোরিয়ায় দিন দিন কমেই চলেছে শিশু জন্মহার। কিভাবে এই হার বাড়ানো যায় তা নিয়ে ভীষণ চিন্তিত কর্তৃপক্ষ। জন্মহার বাড়াতে নতুন নতুন নানা উদ্যোগ নিচ্ছেন তারা । তার মধ্যে অন্যতম উদ্যোগ হলো ডিম্বাণু সংরক্ষণ করা। এই সংরক্ষণের ফলে ভর্তুকি দেবে কর্তৃপক্ষ। খবর বার্তা সংস্থা এএফপি’র।
এতে আরও বলা হয়, দক্ষিণ কোরিয়ায় নারীপ্রতি সন্তান জন্ম দেয়ার শতকরা হার ০.৭ ভাগ। বিশ্বে যেসব দেশে সবচেয়ে কম শিশু জন্মগ্রহণ করে তার মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়া অন্যতম। এর ফলে সেখানে প্রবীণের সংখ্যা বাড়ছে। তার তুলনায় সন্তান জন্ম নিচ্ছে কম।
এতে করে দ্রুত সময়ে প্রবীণরা হারিয়ে যাওয়ার ফলে সেখানে জনসংখ্যা কমে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তাই সরকার নানা রকম প্রণোদনা ও উৎসাহ দিচ্ছে সন্তানের জন্মহার বাড়তে। এর মধ্যে সাম্প্রতিক উদ্যোগ হচ্ছে সিউল শহর কর্তৃপক্ষের ডিম্বাণু হিমায়িত করে সংরক্ষণ করে রাখার প্রযুক্তিতে ভর্তুকি।
সিউলের বাসিন্দা জিওং নামের এক নারীর বয়স এখন ৪০ বছর। কর্তৃপক্ষ ডিম্বাণু সংরক্ষণের যে সুবিধা চালু করেছে, তিনি তা নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বার্তা সংস্থা এএফপিকে তিনি বলেন, ‘আমার বয়সের কারণে সন্তান নেওয়ার চাপ অনুভব করছি। এ কারণে দ্রুত বিয়ে করার পরিকল্পনাও করতে হচ্ছে।’
জিওং আরও বলেন, ‘আমার বয়স যখন মধ্য ৩০-এ পৌঁছায়, তখন আমার পছন্দের ব্যক্তির সঙ্গে দ্রুত বিয়ে করার পরিকল্পনা করেছিলাম। কিন্তু তা ঠিকঠাকমতো এগোয়নি। তাই এ সময় আমাকে অন্য পরিকল্পনা নিতে হয়।’
যদিও অবিবাহিত নারীরা তাদের ডিম হিমায়িত করতে পারে, তবে বাস্তবে উদ্যোগটি শুধুমাত্র সেই নারীদেরই সাহায্য করবে যারা বিয়ে করবে। কারণ ক্লিনিকগুলোতে গর্ভধারণ (আইইউআই) এবং ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন (আইভিএফ) জন্য গেলে, বিবাহের নথির প্রয়োজন হয়।
ডিম্বানু হিমায়িত করে নারীরা বেশি বয়সেও সন্তান নিতে পারবে। তবে ডিম্বানুর গুণমান তীব্রভাবে হ্রাস পাওয়ার আগে, সাধারণত ৩৮ বছর বয়সের পর থেকে এই প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করলে সফল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি বলে ধারণা করা হয়।
দক্ষিণ কোরিয়ার সরকার বলেছে, “কোরিয়ান নারীদের ডিম্বানু হিমায়িত করার উদ্যোগের অর্থ হলো, ভবিষ্যত সন্তান জন্মের সম্ভাবনাগুলোতে সিউল কর্তৃপক্ষের বিনিয়োগ। এটা সবচেয়ে বাস্তব সমাধান হিসেবে নির্ধারিত হয়েছে। তারা আরো বলেছে, ‘বিবাহ এবং গর্ভাবস্থার বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সমাজে নারীদের অংশগ্রহণ আরো স্পষ্ট হয়ে ওঠে। তখন নারীরা ভবিষ্যতে গর্ভধারণ এবং সন্তান জন্ম দিতে আগ্রহ প্রকাশ করে।’
দক্ষিণ কোরিয়ায় ডিম্বাণু হিমায়িত করে রাখার প্রযুক্তি আছে নব্বইয়ের দশক থেকে। কিন্তু সচেতনতা ও চাহিদা ছিল কম। এখন সবাই সচেতন হচ্ছেন। তারা বুঝতে পারছেন আরও বয়স হলে সন্তান নিতে পারবেন না। তা ছাড়া সেই সন্তানকে বড় করে তোলার দায়িত্ব তাদের ওপরই। প্রবীণ ও নবীনের বয়সের ফারাক অনেক বেশি হয়ে গেলে এক সময় মারাত্মক সঙ্কট দেখা দিতে পারে।