বাংলাদেশ ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ জোরদারে চুক্তি সই করেছে দেশের শীর্ষ বাণিজ্য সংগঠন দি ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) এবং কোরিয়া ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (কোইমা)। সোমবার (৬ নভেম্বর) রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
এফবিসিসিআই’র পক্ষে সংগঠনের সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. আমিন হেলালী এবং কোইমার পক্ষে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান কিম বিয়ং-কোয়ান চুক্তিতে সই করেন।
এ চুক্তি বাংলাদেশ ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ক বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে মন্তব্য করেন এফবিসিসিআই সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. আমিন হেলালী। তিনি বলেন, ‘চলতি বছর বাংলাদেশ ও দক্ষিণ কোরিয়া দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক স্থাপনের ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন করছে। দুই বন্ধুপ্রতীম দেশ নিজেদের উন্নয়ন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং অগ্রগতির জন্য দীর্ঘদিন ধরে একসাথে কাজ করছে। বাংলাদেশ ও দক্ষিণ কোরিয়ার সম্পর্ক আরও মজবুত এবং বাণিজ্য জোরদারে বিগত বছরগুলোতে একাধিক ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দল বিনিময় এবং একাধিক সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে।
মো. আমিন হেলালী আরও বলেন, ‘২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ ৫৫ বিলিয়ন ডলার রপ্তানির মাইলফলক অতিক্রম করেছে। প্রবৃদ্ধির এ ধারা অব্যাহত রেখে আমরা ট্রিলিয়ন-ডলার অর্থনীতির দেশ হওয়ার পরিকল্পণা গ্রহণ করেছি এবং ২০৪১ সালের মধ্যে একটি আধুনিক, স্মার্ট বাংলাদেশে রুপান্তরিত করতে আমরা ৩০০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছি। এ লক্ষ্য অর্জনে বিশ্বে নতুন বাজার অনুসন্ধান এবং পণ্য বৈচিত্র্যকরণে সরকারের জন্য কাজ করছে এফবিসিসিআই।’
দক্ষিণ কোরিয়া এরইমধ্যেই বাংলাদেশকে একটি উচ্চ প্রতিশ্রুতিশীল বিনিয়োগ গন্তব্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। শুধুমাত্র কোরিয়ান বিনিয়োগকারীদের জন্য আমাদের সরকার একটি বিশেষ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (স্পেশাল ইপিজেড) প্রতিষ্ঠা করেছে। যেখানে কোরিয়ান বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। চলতি বছরের জুন পর্যন্ত সেখানে ১ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের মাধ্যমে দক্ষিণ কোরিয়া বাংলাদেশের চতুর্থ বৃহত্তম সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগকারীর স্বীকৃতি পেয়েছে। বর্তমানে ২০০ টিরও বেশি কোরিয়ান কোম্পানি বাংলাদেশে কাজ করছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি কোরিয়ান কোম্পানিগুলোকে বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগ এবং সাবকন্ট্রাক্টিংয়ে বিনিয়োগের আহ্বান জানান। এসময় তিনি কোরিয়ান বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশের সেমিকন্ডাক্টর, মাইক্রোচিপস, হাই-টেক, প্লাস্টিক, অটো পার্টস, কৃষি যন্ত্রপাতি, সিরামিক পণ্য এবং সফ্টওয়্যারসহ অন্যান্য সম্ভাবনাময় খাতগুলোতে বিনিয়োগের আহ্বান জানান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ বাংলাদেশের বাণিজ্য সম্ভাবনা তুলে ধরে কোরিয়ান বিনিয়োগকারীদের দেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান।
কোরিয়া ইম্পোরটার্স অ্যাসোসিয়েশনের (কোইমা) চেয়ারম্যান কিম বিয়ং-কোয়ান বাংলাদেশের সাম্প্রতিক উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, এ সমঝোতা স্মারক দুই দেশের মধ্যে শক্তিশালী বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে বাংলাদেশে নিযুক্ত কোরিয়ান রাষ্ট্রদূত পার্ক ইয়ং সিক, এফবিসিসিআই সহ-সভাপতি শমী কায়সার, ডা. যশোদা জীবন দেবনাথ, মোহাম্মদ আনোয়ার সাদাত সরকার ও পরিচালকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।