দেশ উন্নত হলেও দিন দিন যেন করোনা এবং নতুন ভেরিয়েন্ট ওমিক্রনের কাছে অসহায়ত্ব বরণ করছে দক্ষিণ কোরিয়া। গত বছর করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা শূন্যের কোটায় নিয়ে আসা বিশ্বের কাছে সফল দেশ হিসেবে আখ্যায়িত দেশটি আজ প্রতিদিনই রেকর্ডসংখ্যক করোনা সংক্রমিত হচ্ছে। দেশটিতে ৮০ শতাংশ মানুষ সম্পূর্ণরূপে টিকা দেওয়ার পরও লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা সেই সঙ্গে নতুন ভেরিয়েন্ট ওমিক্রনও।
কেডিসিডি তথ্য অনুযায়ী, কোরিয়ায় করোনা প্রাদুর্ভাব শুরুর পর থেকে শনিবার (৪ ডিসেম্বর) ৪ হাজার ৩৫২ জন করোনায় আক্রান্ত হয় যা দেশটিতে এটাই একদিনে সর্বোচ্চ সংক্রমণ শনাক্ত এবং একদিনে সর্বোচ্চ ৭০ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।
এদিকে ওমিক্রনে আক্রান্তের মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯ জনে। কোরিয়ায় শুরুর দিকে যেভাবে করোনা ছড়িয়েছিলো ঠিক একইভাবে ছড়াচ্ছে ওমিক্রনের তাণ্ডব।
প্রথমে নাইজেরিয়া থেকে আগত উজবেকিস্তানী এক যাজক ও তার স্ত্রী থেকে এই প্রথম ওমিক্রন শনাক্ত হয়। নাইজেরিয়ায় সফর ছিল ধর্মপ্রচারের উদ্দেশ্যে। প্রতি বছর নিয়মিতভাবে নাইজেরিয়ায় অনুষ্ঠিত খ্রিস্টানদের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেন তারা। চার্চে দায়িত্বশীল এই যাজক জন্মসূত্রে কোরিয়ার নাগরিক। তারা মিথ্যা বলেছিলেন এবং স্বাস্থ্য বিষয়ক জিজ্ঞাসাবাদের সময় তথ্য গোপন করে কোরিয়ায় প্রবেশ করেছিলেন বলে পুলিশ জানিয়েছে।
দ্য কোরিয়ান হেরাল্ডের অনুসন্ধানে, গত ২৪ নভেম্বর নাইজেরিয়া থেকে দক্ষিণ কোরিয়ায় আসার পর এক দম্পতির ওমিক্রন শনাক্ত হয়। এই দম্পতি ইনচন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তাদের এক বন্ধু ব্যক্তিগত গাড়িতে করে সরাসরি বাড়িতে যায়। টানা ছয় দিনে কোনও বিধিনিষেধ ছাড়াই ঘুরে বেড়ায়, পরিবার, বন্ধুবান্ধব এবং সহকর্মীসহ ৮৭ জনের সংস্পর্শে চলে যায় এই দম্পতি।
স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ ভেরিয়েন্টের সঙ্গে জড়িত একটি সম্ভাব্য সম্প্রদায়ের সংক্রমণ নিয়ে উদ্বিগ্ন। বর্তমানে ৪০০ জনেরও বেশি লোকের ওপর পরীক্ষা চলছে যারা সিউল থেকে ৪০ কিলোমিটার পশ্চিমে ইনচন সেই গির্জায় যেখানে সংক্রামিত ব্যক্তি পরিষেবায় যোগ দিয়েছিলেন।
দক্ষিণ কোরিয়ার রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (কেডিসিডি) কর্মকর্তারা বলেছেন যে, তাদের কিশোর ছেলেরও করোনা ধরা পড়েছে। তবে তার ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের পরীক্ষার ফল এখনো জানানো হয়নি। আবার ওই স্ত্রীর শাশুড়িকে সন্দেহভাজন ওমিক্রন পরীক্ষা করা হয়েছে তারও তদন্ত চলছে।
কোরিয়ার চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা ওমিক্রন ভেরিয়েন্ট সম্পর্কে শঙ্কা প্রকাশ করার পর পরই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বেড়েছে দেশটিতে। করোনার এ ধরনের বিস্তার ঠেকাতে এরই মধ্যে কোরিয়াসহ বিশ্বের অনেক দেশ দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ করে দিয়ে আবার ভ্রমণের নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এক বিবৃতিতে বলছে, যে এখন পর্যন্ত ৪০টি দেশে করোনাভাইরাসের নতুন ভেরিয়েন্ট ওমিক্রন শনাক্ত করা হয়েছে, মাত্র দুই দিন আগে যা ২৩টি দেশে সীমাবদ্ধ ছিলো।
দক্ষিণ কোরিয়ার রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (কেডিসিডি) তথ্য অনুযায়ী কোরিয়ায় মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ালো ৪ লাখ ৪৭ হাজার ৯০৭ জন। শনিবার গত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৭০ জন মারা যায় যা মহামারি শুরু থেকে সর্বোচ্চ মৃত্যুর সংখ্যা বলে জানিয়েছে কেসিডিসি।
এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৮০৯ জন। তবে দেশটি এর প্রাদুর্ভাব অভূতপূর্ব মাত্রায় খারাপের দিকে যাচ্ছে। কোরিয়াস্থ সকল প্রবাসী বাংলাদেশিদের স্বাস্থ্য বিধি মেনে সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে চলাচলের জন্য পরামর্শ দিয়েছে বাংলাদেশ দূতাবাসসহ কোরিয়ার সামাজিক কমিউনিটির নেতারা।
গত ৩ ডিসেম্বর থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত অর্থাৎ আগামী ২ সপ্তাহ কোরিয়া প্রবেশের ক্ষেত্রে সকল দেশের নাগরিকদের ভ্যাকসিন গ্রহণ নিশ্চিত থাকলেও বাধ্যতামূলক ১০ দিনের কোয়ারান্টাইন করতে হবে। ওমিক্রনের বিস্তার রোধে আগামী ৬ ডিসেম্বর থেকে ২ জানুয়ারি পর্যন্ত রাজধানী সিউলে সর্বোচ্চ ৬ জন এবং অন্যান্য সিটিতে ৮ জনের বেশি জনসমাগম করতে নিষেধ করে নির্দেশনা জারি করেছে দেশটির সরকার।
ক্যাফে-রেস্তোরাঁ, ক্র্যাম, স্কুল, সিনেমা থিয়েটার, লাইব্রেরি, জাদুঘর এবং জিমসহ উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলোতে দর্শকদের প্রবেশে ভ্যাকসিন সার্টিফিকেট দেখাতে নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।
সৌজন্যে- জাগো নিউজ