‘প্রবাসীদের জায়নামাজ, লুঙ্গি, পাঞ্জাবী, টুপি দিয়েছে। ভাবতেই পারিনি সরকার আমাদের কথা এত ভাবে। তাদের সম্মান পেয়ে আমি গর্বিত। তাদের কাছ থেকে উপহার পেয়ে অত্যন্ত খুশি৷ কারণ নামাজ পড়তে আমাদের জায়নামাজ লাগবে তারা তাও ভোলেনি৷ এটার মূল্য যাই হোক না কেন আমার কাছে এটা কোটি টাকার উপহার’৷
হৃদয়বিদারক কথাগুলো বলছিলেন ডরমেটরিতে থাকা এক প্রবাসী। তিনি বলেন, ‘মুসলিমদের জন্য উপহার পাঠিয়ে সিঙ্গাপুর সরকার ভালোবাসার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। সিঙ্গাপুরের সরকার ও জনগণের ভালোবাসায় সাধারণ প্রবাসীরা অভিভূত’।
প্রতি বছরই প্রবাসীদের পরিবার থেকে ঈদ উপহার হিসেবে পাঞ্জাবী আসে। করোনাভাইরাসের কারণে এবার সেটা আর সম্ভব হয়নি। সিঙ্গাপুরের সবচেয়ে বড় মার্কেট ‘মোস্তফা সেন্টা’র থেকে অনেককেই পাঞ্জাবী কিনতে দেখা গেছে। তবে নিজে যতই দামী পোশাক কেনা হোক না কেন পরিবার থেকে পাওয়া জিনিসেই বেশি আনন্দ পাওয়া যায়।
তবে সিঙ্গাপুর সরকার প্রবাসী মুসলিমদের অনুভূতির কথা উপলব্ধি করেছেন। তারা ইতোমধ্যে লকডাউনে থাকা ডরমেটরিগুলোতে অভিবাসী কর্মীদের জন্য নতুন জায়নামাজ, লুঙ্গি, পাঞ্জাবী, টুপি উপহার দিতে শুরু করেছে। সিঙ্গাপুর মুসলিম প্রধান দেশ নয় তবুও মুসলিমদের প্রতি তাদের ভালোবাসা দেখে বিষ্মিত হয়েছে পরবাসীরা।
সিঙ্গাপুরে ডরমেটরিতে আইসোলেশনে থাকা রনী মিয়া বলেন, ‘বন্দি অবস্থায় আছি। তাই ঈদ নিয়ে পরিকল্পনা নেই। জানি না কবে এই অবস্থা থেকে মুক্তি পাব। এবার ঈদ নিয়ে কোনো পরিকল্পনা না থাকলেও সিঙ্গাপুর সরকারের পক্ষ থেকে উপহার পেয়ে আমি আনন্দিত’।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হওয়ার পর সরকারি হাউসিং ফ্লাটে অবস্থান করছেন সিঙ্গাপুর প্রবাসী আমিনুল ইসলাম। ঈদের অনুভূতি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার কাছে ঈদ মানে সকালে নতুন জামা পরিধান করে জামাতের সহিত ঈদের সালাত আদায় করা। সালাত শেষে বন্ধু, ভাই, প্রিয়জনদের জড়িয়ে কোলাকুলি করা৷ তাছাড়া আমরা বাংলাদেশিরা ঈদের দিন সেমাই, কোর্মা, পোলাও রান্না করে সবাই একসাথে খেতে পছন্দ করি। এবার করোনাভাইরাসের কারনে কিছুই হচ্ছে না’।
এদিকে ঈদের সালাত জামাতে আদায় করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে ঘরে বসে ফেসবুক লাইভে তাকবির অনুসরণ করে সালাত আদায় করতে পারবে বলে জানা গেছে। করোনায় পজিটিভ জাহাঙ্গী। বর্তমানে তানজং পাগার টার্মিনালে অবস্থান করছে৷ ঈদ ও রমজান সম্পর্কে জানতে চাইলে বলেন, আমার জন্য দোয়া করবেন৷ করোনায় পজিটিভ হলেও আমার শারীরিক অবস্থা ভালো। তবে ডরমেটরিতে ফিরে যাবার জন্য মনটা অস্থির হয়ে আছে৷
তিনি বলেন, ঈদ নিয়ে আমার কোনো ভাবনা নেই। এখন শুরু একটাই ভাবনা কবে করোনাভাইরাস থেকে মানবজাতি মুক্তি পাবে৷ আমার শুধু একটাই চাওয়া আল্লাহ দ্রুত করোনাভাইরাস থেকে মানবজাতিকে রক্ষা করো। এবারের ঈদ আমাদের জন্য এক বিচিত্র অভিজ্ঞতা হতে যাচ্ছে৷ তবুও আমি সবাইকে বলব করোনাভাইরাস থেকে নিজেকে, বন্ধুকে ও পরিচিতজনদের রক্ষা করতে সরকারি নির্দেশনাগুলো সকলের পালন করা উচিত৷
ওমর ফারুকী শিপন, সিঙ্গাপুর