অসুস্থতার কারণে নয়, সম্ভবত প্রাণঘাতী নতুন করোনাভাইরাস নিয়ে উদ্বেগ থেকেই উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন তার দাদার জন্মবার্ষিকীসহ বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠানে উপস্থিত হননি, বলছে দক্ষিণ কোরিয়া। মঙ্গলবার পার্লামেন্টে উত্তর কোরিয়া বিষয়ক দক্ষিণ কোরিয়ার একত্রীকরণ মন্ত্রী কিম ইয়ন-চুল এ ধারণা প্রকাশ করেন।
১৫ এপ্রিল উত্তর কোরিয়ার প্রতিষ্ঠাতা ও কিমের দাদা কিম ইল-সুংয়ের জন্মবার্ষিকীর আয়োজন ছিল। ওই অনুষ্ঠান এবং পরের প্রায় দুই সপ্তাহজুড়ে কিমের অনুপস্থিতি তার স্বাস্থ্য নিয়ে নানা জল্পনার জন্ম দিয়েছে। পশ্চিমা বিভিন্ন গণমাধ্যমে ‘কিম গুরুতর অসুস্থ’ বলে খবর হয়েছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার কর্মকর্তারা অবশ্য শুরু থেকেই এসব প্রতিবেদনের তথ্য প্রত্যাখ্যান করে এসেছেন। উত্তর কোরিয়ায় ‘অস্বাভাবিক কোনো কর্মকাণ্ড’ পরিলক্ষিত হয়নি জানিয়ে কিম ‘সম্ভবত অসুস্থ’- এ ধরনের প্রতিবেদন নিয়ে সতর্কও করেছেন তারা।
মঙ্গলবার পার্লামেন্ট অধিবেশনে আইনপ্রণেতাদের উদ্দেশ্যে দক্ষিণ কোরিয়ার মন্ত্রী ইয়ন-চুল বলেন, “উত্তর কোরিয়া জানিয়েছে, তাদের দেশে কারও দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়নি। প্রাদুর্ভাব থামাতে দেশটি শুরুর দিকেই কঠোর সব পদক্ষেপ নিয়েছিল, যে কারণে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে কিমের অনুপস্থিতি খুব একটা অস্বাভাবিকও নয়।”
“এটি সত্য যে ক্ষমতায় বসার পর থেকে তিনি (কিম জং-উন) কখনোই কিম ইল-সুংয়ের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে অনুপস্থিত ছিলেন না। কিন্তু করোনাভাইরাস নিয়ে উদ্বেগের কারণে দেশটি জন্মবার্ষিকীর নানান আয়োজন ও ভোজসহ অনেক কিছুই বাতিল করেছে।”
দক্ষিণ কোরিয়ার এ মন্ত্রী আরো জানান, চলতি বছরের মধ্য জানুয়ারি থেকে অন্তত দুইবার কিম প্রায় ২০ দিন জনসম্মুখে অনুপস্থিত ছিলেন।“বর্তমান পরিস্থিতিতে এটা অস্বাভাবিক বলে মনে করছি না আমি,” বলেছেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পও উত্তর কোরিয়ার শীর্ষ নেতার ‘অসুস্থতার খবর’ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন। কিম কী করছেন সে ব্যাপারে ভাল ধারণা আছে বলে সোমবার জানিয়েছিলেন তিনি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট অবশ্য এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলেননি।
একইদিন যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট এক নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ এড়াতে কিম আড়ালে চলে গেছেন, এমনটাও হতে পারে।
উপকূলীয় অবকাশযাপন কেন্দ্র উনসানে কিমের ট্রেন দেখা যাওয়ার অর্থ কিম সেখানে অবস্থান করছেন, কিংবা সম্প্রতি সেখানে গিয়েছিলেন বলেও ধারণা তাদের।“এ ধরনের উপসংহারের পেছনে যেহেতু নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্য নেই, তাই যুক্তরাষ্ট্র এখনও কিম অসুস্থ এমন ধারণার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারেই বিবেচনা করছে,” বলছে সেই সূত্র।
ওয়াশিংটনভিত্তিক উত্তর কোরিয়া পর্যবেক্ষণকারী প্রকল্প ‘থার্টি এইট নর্থ’ শনিবার জানায়, স্যাটেলাইটের ছবিতে গত সপ্তাহে উনসানে যে ট্রেনটি দেখা গেছে, সেটি সম্ভবত কিমের বিশেষ ট্রেন। এ তথ্যের উপর ভিত্তি করেই বিভিন্ন প্রতিবেদনে কিম ওই এলাকায় আছেন বলে অনুমান করা হয়।
উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে ১১ এপ্রিলের একটি বৈঠকে সভাপতিত্ব করার পর থেকে কিমের অবস্থান সংক্রান্ত কোনো খবর জানানো না হলেও বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানকে কিমের চিঠি ও কূটনৈতিক বার্তা পাঠানোর খবর প্রায় প্রতিদিনই দিচ্ছে তারা।
“এসব চিঠি ও বার্তাই ইঙ্গিত দিচ্ছে যে কিম এখনো তার দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন,” বলেছেন উত্তর কোরিয়া বিষয়ক দক্ষিণ কোরিয়ার মন্ত্রী ইয়ন-চুল।
ওদিকে, জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে বলেছেন, কিমের অসুস্থতা সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রতিবেদন বিষয়ে তিনি অবগত। এ বিষয়ে গভীর নজর রাখা হচ্ছে।
মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া নতুন করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব রুখতে উত্তর কোরিয়া অনেক আগেই তাদের সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছিল। দেশের ভেতর কঠোর কোয়ারেন্টিন নির্দেশনা কার্যকর করাসহ বেশ কয়েকটি বড় আয়োজন বাতিলও করেছিল তারা।
“কিম যদি কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে লুকিয়ে থাকেন তাহলে তা দেশটির গণমাধ্যমের ‘সংকট চমৎকারভাবে মোকাবেলা হয়েছে’ সংক্রান্ত অ্যাখ্যানের বেলুন ফুটো করে দেবে,” বলেছেন উত্তর কোরিয়া পর্যবেক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান রিস্ক গ্রুপের প্রধান নির্বাহী চ্যাড ও’ক্যারল।
“যদি তিনি কেবল সংক্রমণ এড়ানোর চেষ্টাই করেন, তাহলেওতো সহজেই তার স্বাস্থ্যেজ্জ্বল চেহারা ছবি বা ভিডিও প্রকাশ করাই যায়,” বলেছেন তিনি।