দুর্নীতির মামলায় ২ বছর এক মাস ১৭ দিন কারাবন্দি থাকার পর গতকাল বুধবার (২৫ মার্চ) সরকারের নির্বাহী আদেশে মুক্তি পেয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। বিকেল সোয়া ৪টার দিকে হুইলচেয়ারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ছয়তলা কেবিন ব্লক থেকে নিয়ে আসা হয় তাকে।
হাসপাতাল থেকে বের হওয়ার সময় খালেদা জিয়ার পরনে ছিল হালকা গোলাপি রঙের বোরকা, চোখে পুরোনো সেই চশমা। করোনা থেকে বাঁচতে মুখে ছিল মাস্ক। তবে হাত কাপড়ে ঢাকা থাকলেও, ছিল না হ্যান্ড গ্লাভস।
জানা যায়, বেগম জিয়ার হাতের আঙুল বেঁকে যাওয়ার কারণে হ্যান্ড গ্লাভস পরানো সম্ভব হয়নি। যদিও পরিবার ও দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, খালেদা জিয়াকে সম্পূর্ণভাবে করোনা থেকে সুরক্ষার ব্যবস্থা করে হাসপাতাল থেকে যেন বের করা হয়।
খালেদা জিয়াকে হাসপাতাল থেকে বের করার সময় উপস্থিত ছিলেন- পরিবারের সদস্য, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিএনপিপন্থী চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) সভাপতি ডা. হারুন আল রশিদসহ অনেকই।
ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি ডা. হারুন আল রশিদ বলেন, ‘আমরা বলেছিলাম, বেগম খালেদা জিয়াকে হাসপাতাল থেকে বের করার সময় হ্যান্ড গ্লাভস পরিয়ে বের করার জন্য। কারণ আমরা জানতাম, আমরা নিষেধ করার পরও খালেদা জিয়ার অনুসারীরা তাকে দেখার জন্য আসবে। অনুসারীরা বাধা-নিষেধ মানবে না। এই অবস্থায় ওনার শারীরিক নিরাপত্তার ব্যাঘাত ঘটতে পারে। এ কারণে আমরা চিকিৎসক হিসেবে বলেছিলাম, করোনা থেকে ওনাকে সম্পূর্ণ সুরক্ষা দিয়ে বের করার জন্য। কিন্তু তার হাতের আঙুল বেঁকে যাওয়ার কারণে হ্যান্ড গ্লাভস পরতে পারেননি।’
তিনি বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া হাসপাতাল থেকে হুইলচেয়ারে বের হয়েছেন। সে সময় পরনে গাউন ছিল, মুখে মাস্ক ছিল। কিন্তু হাতে হ্যান্ড গ্লাভস ছিল না। এ সময় ওনার হাত কাপড়ে ঢাকা ছিল। যেসব চিকিৎসকরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) খালেদা জিয়াকে চিকিৎসা দিয়েছেন তাদের মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি যে, ওনার হাত বেঁকে যাওয়ার কারণে উনার জন্য হ্যান্ড গ্লাভস পরা সম্ভব হয়নি।’
এ ডাক্তার নেতা বলেন, ‘অতীতে আপনারা সবসময় দেখেছেন যে, বেগম খালেদা জিয়া যখন গাড়িতে ওঠেন তখন ওনার ভক্ত, অনুসারী, দলীয় নেতাকর্মীদের হাত নাড়িয়ে শুভেচ্ছা জানাতেন। কিন্তু এবার হাসপাতাল থেকে বাসায় যাওয়ার পথে এটা দেখা যায়নি।’
বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য মেডিকেল টিম গঠনের ব্যাপারে জানতে চাইলে বলেন, ‘মেডিকেল টিমের বিষয়ে আমি ব্যক্তিগতভাবে কিছু জানি না, তবে শুনেছি মেডিকেল টিম গঠন করা হবে। মেডিকেল টিমের বিষয়ে সাধারণত পরিবার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। ম্যাডামের ব্যক্তিগত চিকিৎসক আছেন, তাদের দিয়ে উনি আগেও চিকিৎসা করিয়েছেন। তাদের মাধ্যমে একটি টিম গঠন করে বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা দেয়া হবে। এ বিষয়ে আমাদের কাছে পরামর্শ চাইলে আমরা পরামর্শ দিতে পারব। এই মেডিকেল টিমে কাকে কাকে নেয়া যায় অথবা বিশেষজ্ঞরা কারা ভালো আছে। আমাদের কাছে জানতে চাওয়া হলে আমরা এ বিষয়ে বলতে পারব।’
১১ মাস ধরে বেগম জিয়া বিএসএমএমইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন। এর আগে ২০০৮ সালে বিএনপি চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে মামলার রায়ে তার পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হয়। পরে হাইকোর্ট সেই সাজা বাড়িয়ে ১০ বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দেন।