বাবা অসুস্থ শুনে সুদূর কাতার থেকে ছুটে এসেছিলেন প্রবাসী ছেলে। কিন্তু, করোনা আক্রান্ত সন্দেহে বিদেশফেরত ওই ব্যক্তিকে আইসোলেশনে পাঠায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যেই মারা যান বৃদ্ধ বাবা। তবে, ঝুঁকি বাড়াননি ওই লোক। হাসপাতালের জানালা দিয়েই দেখলেন, বাবার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আর ভিডিও কলে দেখেছেন শেষকৃত্যটুকু। সম্প্রতি এ ঘটনা ঘটেছে ভারতের কেরালায়।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম জানায়, বিদেশ ফেরত ওই ব্যক্তির নাম লিনো আবেল। তিনি কাতারে থাকতে হঠাৎ খবর পান, বাবা পড়ে গিয়ে আহত হয়েছেন, এখন হাসপাতালে ভর্তি। সঙ্গে সঙ্গেই দেশে ফেরেন লিনো। তবে, ৮ মার্চ ফেরার পর থেকেই কাশি হচ্ছিল তার। একে তো করোনা আক্রান্ত কাতার থেকে ফিরেছেন, তার ওপর কাশি, এ কারণে নিজেই হাসপাতালে যান লিনো। পরে, কোট্টায়ামের মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে রাখা হয় তাকে।
ওই হাসপাতালেই ভর্তি ছিলেন লিনোর বাবা। পরের দিন অর্থাৎ ৯ মার্চ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তিনি। কিন্তু, একই হাসপাতালে থাকা সত্ত্বেও বাবাকে সামনাসামনি দেখে যেতে পারেননি লিনো। জানালা দিয়েই দেখতে হয়েছে মরদেহ নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য। অশ্রু বইয়েছেন ভিডিও কলে শেষকৃত্য দেখে।
এই ঘটনায় কষ্ট পেলেও সচেতন নাগরিকের দায়িত্ব পালন করতে পেরে খুশি ৩০ বছর বয়সী লিনো। গত ১২ মার্চ ফেসবুকে তিনি লেখেন, ‘নিজেই হাসপাতালে না আসলে হয়তো বাবাকে শেষবারের মতো দেখতে পেতাম। শেষকৃত্যও করতে পারতাম। কিন্তু, আমি চাইনি প্রাণঘাতী এই ভাইরাস আমার জন্য অন্যদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ুক।’
এমন অসাধারণ দায়িত্ববোধ ও সচেতনতার জন্য লিনোর প্রশংসা করেছেন কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন। তিনি বলেন, ‘এটা অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। ওই যুবক এত দূর থেকে বাবাকে দেখার জন্য এসেছিল। তারপরও শেষ দেখা হলো না। নিজে হাসপাতালে গিয়ে সমাজের প্রতি দারুণ দায়বদ্ধতা দেখিয়েছেন তিনি। তার প্রতি গোটা রাজ্যের মানুষ কৃতজ্ঞ। আশা করছি, সবাই এভাবেই সচেতন হয়ে নিজের দায়িত্ব পালন করবেন।’
শেষপর্যন্ত অবশ্য লিনো আবেলের শারীরিক পরীক্ষায় করোনাভাইরাস পাওয়া যায়নি। তিনি এখন বাড়িতে ফিরে পরিবারের বাকি সদস্যদের সঙ্গে সময় কাটাতে চান।
সূত্র: এনডিটিভি