ওমর ফারুক হিমেল, দক্ষিণ কোরিয়া থেকে: দক্ষিণ কোরিয়ায় সংক্রামক রোগজনিত সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করার দুইদিন পর আক্রান্তের সংখ্যা ৬ হাজার ৮৮ জনে দাঁড়িয়েছে। মৃত্যু হয়েছে ৪০ জনের। সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরেছে ৫০ জন। মুহূর্তের বিভিন্ন শহরে রোগ ছড়িয়ে মৃত্যুপুরীতে পরিণত হচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়া। ইতোমধ্যে দেশটিতে অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
সম্প্রতি কোরিয়াস্থ বাংলাদেশিদের সর্বোচ্চ সতর্কতা মেনে চলার জন্য বাংলাদেশ দূতাবাসের ফেসবুক পেজ থেকে ভিডিও বার্তা প্রকাশ করেছেন দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলাম।
আবিদা ইসলাম বলেন, করোনাভাইরাসের প্রভাবে দক্ষিণ কোরিয়ায় সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা আশংঙ্কাজনকহারে বেড়েই চলেছে। গত ২০ জানুয়ারি কোরিয়ায় প্রথম এই রোগের কথা জানতে পারি। পরবর্তী এক মাসে অর্থাৎ ১৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এই রোগের সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা ছিল ৫১ জন। কিন্ত গত পাঁচ দিনে তা ৮০০ জন ছাড়িয়ে গেছে।
https://www.facebook.com/jagonews24/videos/205566067322952/
তিনি বলেন, ‘প্রতি ঘণ্টায় রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। দুঃখজনকভাবে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এরই মধ্যে ৪০ মারা গেছেন। দেশটির সরকার ভাইরাস সংক্রান্ত সর্বোচ্চ সতর্কতা সংকেত ‘রেড অ্যালার্ট’ জারি করেছেন। তারা এই রোগের কেন্দ্রস্থল হিসেবে দেগু ও চেওংদো শহরকে চিহ্নিত করেছেন’।
‘তাদের স্পেশাল কেয়ার অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করেছেন। তবে এই ভাইরাসের প্রকোপ বিভিন্ন শহরে ছড়িয়ে পড়েছে। সরকার এই সংকট থেকে উত্তরণের জন্য এদেশে বসবাসকারী সব দেশি এবং বিদেশি নাগরিকদের সক্রিয় সহযোগিতা কামনা করেছেন’।
রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘বাংলাদেশি ভাই-বোনেরা সুস্থ রয়েছেন। কোনো বাংলাদেশি নাগরিক এ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন- এমন কোনো তথ্য এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। তবে দূতাবাসের পক্ষ থেকে আপনাদের সবাইকে আবারো সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি’।
তিনি বলেন, ‘কারো যদি এই রোগের কোনো লক্ষণ দেখা যায় তবে দেরি না করে কল সেন্টারে ১৩৩৯ নম্বরে এবং স্থানীয় হাসপাতালে যোগাযোগ করুন। আপনার ভিসা সংক্রান্ত যদি কোনো জটিলতা থাকলে ভয় পাবেন না, আতঙ্কিত হবেন না, এজন্য আপনাকে দেশে পাঠানো হবে না বা জেলেও পাঠানো হবে না। বিনামূল্যে এ দেশের সরকার আপনাকে চিকিৎসা সেবা দেবে’।
এ ছাড়াও অন্যকোনো ধরনের অসুস্থতা নিয়ে হাসপাতালে যেতে হলে অবশ্যই হাতমোজা বা গ্লাভস এবং মুখে মাস্ক পরে যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। সব সময়ের জন্য হাতমোজা ও মাস্ক ব্যবহার করতেও বলা হয়েছে। যেহেতু হাঁচি বা কাশি থেকে এ রোগটি ছড়ানোর আশঙ্কা রয়েছে সে জন্য সভা-সমাবেশ, গণপরিবহন এসব কিছু এড়িয়ে চলার চেষ্টা করবেন।
অত্যন্ত জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাড়ি বা কর্মস্থলের বাইরে না যাওয়াই ভালো। প্রবাসী বাংলাদেশিদের যে কোনো সহযোগিতার জন্য দূতাবাসের হটলাইন ২৪ ঘণ্টা খোলা রয়েছে। হটলাইন নম্বর: 01028814056। কেউ চাইলে ডাকযোগেও এ সেবা নিতে পারবেন। এজন্য বাংলাদেশ দূতাবাসে স্বশরীরে সিউলে আসার কোনো প্রয়োজন নেই বলে জানান রাষ্ট্রদূত।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা বাড়ছেই। এখন পর্যন্ত ৩ হাজার ২৮৫ জনের প্রাণ কেড়েছে এই ভাইরাস। বিভিন্ন দেশে ৯৫ হাজার ৪৮১ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। এছাড়া চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে ৫৩ হাজার ৬৮৮ জন।
শুধুমাত্র চীনের মূল ভূখণ্ডেই আক্রান্তের সংখ্যা ৮০ হাজার ৪৩০ এবং মৃত্যু হয়েছে ৩ হাজার ১২ জনের। চীনের বাইরে সবচেয়ে বেশি আক্রান্তের সংখ্যা দক্ষিণ কোরিয়ায়। সেখানে এখন পর্যন্ত ৬ হাজার এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে এবং মারা গেছে ৪০ জন।
অপরদিকে চীনের বাইরে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে ইতালিতে। সেখানে এখন পর্যন্ত এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৩ হাজার ৮৯ এবং মৃত্যু হয়েছে ১০৭ জনের। অপরদিকে, মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইরানেও এই ভাইরাসের প্রকোপ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। সেখানে এখন পর্যন্ত ২ হাজার ৯২২ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে এবং ৯২ জনের মৃত্যু হয়েছে।