বাংলাদেশী স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন ইন কোরিয়া (বিএসএকে) এর আয়োজনে দক্ষিণ কোরিয়ায় অনুষ্ঠিত হলো বাংলাদেশী ছাত্রছাত্রীদের দুইদিনব্যাপী ১৮তম মিলনমেলা। এবারের মিলনমেলার স্থান হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে কোরিয়ার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের শহর হিসেবে পরিচিত ঐতিহাসিক জঞ্জু (Jeonju) নগরী কে।
দক্ষিণ কোরিয়ার অন্যতম হানোক হ্যারিটেজ ভিলেজ হিসেবে পরিচিত জঞ্জুতে এই মিলনমেলায় অংশ নেয় প্রায় দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী। কোরিয়ার অন্যতম এই শহরে অসাধারণ দুইদিন কাটিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ায় অধ্যয়নরত বাংলাদেশী শিক্ষার্থীরা। মিলনমেলায় দক্ষিণ কোরিয়ার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা ছাড়াও পোস্ট-ডক্টরাল ফেলো এবং আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ যোগ দেন। গত শনিবার এবং রবিবার জঞ্জু শহরের জনবুক ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে দক্ষিণ কোরিয়ার বাংলাদেশী ছাত্রছাত্রীদের একমাত্র সংগঠন বিএসএকে এই আয়োজন করে।
মিলনমেলার প্রথমদিনে তাহমিনা তাসনীম নাহার এবং মোঃ ইমতিয়াজ উদ্দিন ভূঁইয়ার উপস্থাপনায় জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে শুরু হয় ২ দিনব্যাপী আয়োজন এর আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিএসএকের ইটিআরটি সদস্য মিনারুল ইসলাম। এরপরে বিএসএকের সার্বিক কার্যক্রম উপাস্থপন করেন নির্বাহী সদস্য তাহমিনা বিলকিস। নবীন এবং ডিগ্রীপ্রাপ্ত ছাত্রছাত্রীদের হাতে ক্রেস্ট এবং সার্টিফিকেট তুলে দেন মিলনমেলার প্রধান অতিথি প্রফেসর শীম জেই, ডেপুটি ভাইস প্রসিডেন্ট জনবুক ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির, কিয়ংইন ওহ, কেবিসিসির এক্সিকিউটিভ প্রেসিডেন্ট, বাংলাদেশ কমিউনিটি ইন কোরিয়ার (বিসিকে’র) প্রেসিডেন্ট এম জামান সজল,বিসিকে’র নির্বাহী সদস্য জাহিদুর ইসলাম, টিকন সিস্টেমের সিইও এম এন ইসলাম, প্রাইম ট্রাভেলের সিইও আবু বক্কর সিদ্দিক, বিসিকের সাবেক প্রেসিডেন্ট হাবিল উদ্দিন এবং অন্যান্য অতিথিবৃন্দ।এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন রোকনুজ্জামান, মাননীয় উপসচিব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, ড. নুর আলম এসিস্ট্যান্ট প্রফেসর কিয়ংদোং ইউনিভার্সিটি, এবং ঘানাইয়ান স্টুডেন্ট এসোসিয়েশন ইন কোরিয়ার (ঘাসকা) প্রেসিডেন্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। বিএসএকের মিলন মেলায় সর্বাধিক সংখ্যক অংশগ্রহণ কারীর পুরস্কার পান ড. হাসান তুরাবী।
নবীনদের পক্ষে জেসমিন আক্তার এবং ডিগ্রীপ্রাপ্তদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন শামসুদ্দিন আহমেদ। বিদায়ী ইটিআরটি সদস্যদের পক্ষে স্মৃতিচারণ করেন মিলন চৌধুরী। বাংলাদেশী গবেষকদের পক্ষ থেকে বিএসএকে নিয়ে অভিমত ব্যক্ত করেন ড. মোহাম্মদ শামসুদ্দিন আহমেদ। সাবেক ইটি-আরটি সদস্যদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন আফজাল হোসেন।অনুষ্ঠানে বিএসএকে’র পক্ষে সমাপনী বক্তব্য রাখেন বিএসএকের এক্সিকিউটিভ কমিটির সদস্য মোহাম্মদ গোলাম রাব্বানী।
মিলনমেলায় অংশ নেওয়া নবীন শিক্ষার্থীদের উচ্ছ্বাস ছিলো চোখে পড়ার মত। ব্যস্ততাময় প্রবাস জীবনে শত বাংলাদেশীকে একসাথে পাওয়া যেন সোনার হরিণ। যদি তাতে যোগ হয় হাসি, আড্ডা, গান, ভোজনবিলাস, তাহলেতো কথাই নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস, গবেষণার ব্যস্ততার মাঝে প্রতি সেমিস্টারে দুই দিনের জন্য বাংলাদেশী ছাত্রছাত্রীদের বাংলাদেশের সংস্কৃতিতে ফিরে যাওয়ার সুযোগ করে দেয় বিএসএকে। নানা আয়োজনের পাশাপাশি কোরিয়ার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ছাত্রছাত্রীদের পরিচয় হওয়ার অসাধারণ একটা সুযোগ এই মিলনমেলা।
অনেকে এই অনুষ্ঠানে এসে একসাথে এতো বাংলাদেশী ছাত্রছাত্রীদের পেয়ে, খেলা-ধুলা, বাংলাদেশী সাংস্কৃতিক উপভোগ এবং দেশীয় খাবার উপভোগ করতে পেরে আয়োজকদের ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।
উল্লেখ্য, ২০১১ সালের ১৩ মার্চ দক্ষিণ কোরিয়ায় বাংলাদেশী ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে বিভিন্ন ধরণের পারষ্পরিক সাহায্য সহযোগিতার লক্ষ্যে বিএসএকে গঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ফেসবুক এবং ওয়েবসাইটের মাধ্যমে বাংলাদেশী ছাত্রছাত্রীদের বিভিন্ন সহযোগিতা দিয়ে আসছে সংগঠনটি। এছাড়া প্রতিবছর দুই সেমিস্টারে একটি করে দুইবার মিলনমেলারও আয়োজন করে আসছে সংগঠনটি।
আল জাবের ফয়সাল, নির্বাহী সদস্য, বাংলাদেশী স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন ইন কোরিয়া। হানগুক ইউনিভার্সিটি অফ ফরেন স্টাডিজ, দক্ষিণ কোরিয়া।