‘বিপিএলের টপ ফোরে থাকবে কোন দল? আচ্ছা! পাকিস্তান সফর কি শেষ পর্যন্ত হবে? বাংলাদেশ ক্রিকেট দল কি শেষ মুহূর্তে পাকিস্তান খেলতে যাবে?’ এ মুহূর্তে দেশের ক্রিকেট অনুরাগীদের মনে এ দুটি প্রশ্নই উঁকি ঝুঁকি দিচ্ছে।
বিপিএল যত শেষের দিকে যাচ্ছে, ততই সম্ভাব্য সেরা চার দল নিয়ে কৌতুহলি প্রশ্ন জোরালো হচ্ছে। আর বিপিএল শেষ হবার পরপরই যেহেতু পাকিস্তান খেলতে যাবার সময় নির্ধারিত আছে, তাই সে প্রশ্নটাও অনেকের মুখে মুখে।
আগেই জানা, সফর অনিশ্চিত হয়েছে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড পিসিবির এক তরফা চিন্তা ও একগুয়েমি ভাবনার কারণে। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, বিসিবি বেশ আগেভাগেই নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছে। পিসিবিকে জানিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল শুধু মাত্র তিন ম্যাচের টি টোয়েন্টি সিরিজ খেলতে সপ্তাহ খানেকের জন্য পাকিস্তান যেতে পারে। এর বেশি সময়ের জন্য নয়।
অন্যদিকে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড অনড়, নাহ! বাংলাদেশকে পুরোদস্তুর সফর মানে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ ও তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলার জন্য একবারে আসতে হবে। বিসিবির সর্বোচ্চ মহল থেকে জানা গেছে পিসিবি এখনো তাদের আগের অবস্থানেই আসে। একচুলও সরে আসেনি। অথচ, বিসিবি থেকে মাঝে কিছু বিকল্প প্রস্তাবও দেয়া হয়েছে।
বোর্ডের উচ্চ পর্যায়ের সর্বোচ্চ সূত্র নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ টেস্ট খেলতে পাকিস্তান কখনোই যাবে না- এমন কথা বলা হয়নি। বরং দুই বোর্ডের মধ্যে কথা-বার্তায় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড সরাসরি জানিয়ে দিয়েছে, আাগে আমাদের জাতীয় দল টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলে আসুক।
সাত দিনে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলতে গেলে পাকিস্তানের নিরাপত্তা ব্যবস্থাসহ দেশটির বর্তমান আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট ও অবস্থান সম্পর্কে পরিষ্কার ধারনা জন্মাবে। সেটা সন্তোষজনক হলে তারপর না হয় আবার গিয়ে টেস্ট সিরিজ খেলার চিন্তা ভাবনা করা যাবে।
আজ রোববার সকালে বিসিবি প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দীন চৌধুরী সুজন পরিষ্কার জানালেন, ‘আমরা পিসিবিকে বলেছি আগে আমাদের জাতীয় দল টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলতে যাক। তারা টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলতে গেলে পাকিস্তানের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে ধারনা জন্মাবে। তারা একদম চোখে দেখে আসবে বি অবস্থা! সেখানে আরও বেশি সময় অবস্থান করে টেস্ট সিরিজ খেলা সম্ভব হবে কি না? সে ধারনাটা অনেক বেশি পরিষ্কার হবে। তাই আমরা বলে দিয়েছি আগে আমাদের দল টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলে আসুক। তারপর তাদের কাছ থেকেব ফিডব্যাক শুনে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবো।’
মানে বিসিবি সিইও পরিষ্কার বুঝিয়ে দিয়েছেন, জাতীয় দল টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলে দেশে ফেরার পর যদি ক্রিকেটার ও কোচিং স্টাফরা পাকিস্তানে আরও বেশি সময় থেকে টেস্ট সিরিজ খেলার ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করে এবং উৎসাহ দেখায়- তাহলে তখনই কেবল টেস্ট সিরিজ খেলতে যাওয়ার বিষয়টি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হবে। অন্যথায় নয়।
কিন্তু বিসিবির শেষ কথা একটাই, আগে টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলতে যাবে তারা। অন্যদিকে পিসিবি অনড়, নাহ! বাংলাদেশ সফরে আসলে পুরো টেস্ট এবং টি-টোয়েন্টি সিরিজ দুটি এক সঙ্গেই খেলতে আসতে হবে।
এখন বিসিবি তাদের অবস্থান থেকে এক চুলও সরে আসবে না। আর পিসিবির কথা, টেস্ট সিরিজসহ টি-টোয়েন্টি খেলতে আসতে হবে। অন্যথায় শুধু টি-টোয়েন্টি সিরিজের জন্য বাংলাদেশ আসুক, এটা চাই না আমরা। অর্থাৎ শুধু টি-টোয়েন্টি সিরিজ আয়োজনে মোটেই উৎসাহি নয় পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড।
এই যখন অবস্থা, তাতে করে কি আদৌ টাইগারদের পাকিস্তান সফরের সম্ভাবনা আছে? এদিকে হাতে সময়ও নেই তেমন। সব কিছু ঠিক থাকলে তো বিপিএল শেষ হওয়ার কয়েক দিনের মধ্যেই জাতীয় দলের পাকিস্তান সফরের জন্য সময় নির্ধারিত রয়েছে; কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিসিবি ও পিসিবির লক্ষ্য- মনোভাব দু’রকম, তাতে করে কি আদৌ পাকিস্তান সফর সম্ভব?
খুব স্বাভাবিক সমীকরণই বলে দিচ্ছে, নাহ! মোটেই সম্ভব নয়। শুধু টি-টোয়িন্টি সিরিজ খেলতে বাংলাদেশকে নিতে মোটেই আগ্রহী নয় পিসিবি। আর বিসিবিও বারবার নানাভাবে জানিয়েছে, এখনই টেস্ট সিরিজ খেলতে যাওয়া সম্ভব নয়। আগে টি-টোয়েন্টি সিরিজটা হোক, তারপর অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা। এরকম বিপরীতমুখি অবস্থান যেখানে বিরাজ করছে, সেখানে ধরেই নেয়া যায় বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের পাকিস্তান সফর তাহলে অনিবার্যভাবেই বাতিলের পথে।
সব রকম হিসেব নিকেশ ও বাস্তবতার নিরিখে বোঝাই যাচ্ছে পিসিবি তাদের অবস্থান থেকে সরে না দাঁড়ালে বাংলাদেশ দল পাকিস্তান সফরে যাবে না। এমন অবস্থায় কি পাকিস্তান সফর বাতিলের পথে? তবে কি বিসিবি পাকিস্তান সফর বাতিলের ঘোষণা দিতে যাচ্ছে? বিসিবি সিইও নিজামউদ্দীন চৌধুরী সুজনের কাছে শেষ প্রশ্ন ছিল এটাই ।
বিসিবি প্রধান নির্বাহী অবশ্য সরাসরি ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ করেননি। বলেছেন, ‘কথা চলছে। আমরা আমাদের অবস্থান জানিয়েছি আগেই। এবং এখনো সে অবস্থানেই আছি আমরা। তবে পিসিবি যদি আগে টি টোয়েন্টি সিরিজ আয়োজনে উৎসাহ দেখাতো বা দেখায় , তাহলে হয়ত পাকিস্তান সফরে যাবার একটা ইতিবাচক ক্ষেত্র তৈরি হতো। বর্তমান অবস্থায় সেটা নেই। তবে কি পাকিস্তান সফরের দরজা বন্ধ হওয়ার পথে?
নিজামউদ্দীন চৌধুরী সুজনের শেষ কথা, ‘সেটা আসলে বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন সাহেবই চূড়ান্ত করবেন। আমি শুধু বর্তমান প্রেক্ষাপট এবং আমাদের অবস্থানটা জানাতে পারি।’
পিসিবি তাদের সিদ্ধান্ত না পাল্টালে কি হবে? আমরা মানে বিসিবি কি সিদ্ধান্ত নিব? সেটা বিসিবি সভাপতিই ঠিক করবেন। কোন আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসলে, তিনিই দেবেন।’