Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

portugalসম্প্রতি পর্তুগালে নাগরিকত্ব আইন সংশোধন নিয়ে দেশটির অভিবাসীদের মধ্যে বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে। পর্তুগালে জন্ম নেওয়া শিশুরা পর্তুগিজ নাগরিকত্ব পেতে পারে এমন শিরোনামের বেশ কয়েকটি অনলাইনে নিউজ প্রকাশের জের ধরে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়।

সম্প্রতি পর্তুগালের দুটি মাইনর রাজনৈতিক দল পি সি পি এবং প্যান পর্তুগিজ নাগরিকত্ব আইন সংশোধনের বেশ কয়েকটি প্রস্তাব তুলে ধরে। যা আইন করে বাস্তবায়ন হতে হলে সংসদে বেশির ভাগ সদস্যের ভোটে বিল আকারে পাস হতে হবে।

chardike-ad

প্রস্তাবিত নতুন নাগরিকত্ব আইনে পর্তুগালে কোনো সন্তানের জন্ম হলে তাকে জন্মসূত্রে পর্তুগিজ নাগরিকত্ব প্রদানের সুপারিশ করা হয়েছে যা আগে বাবা-মা দু’জনের একজন সর্বনিম্ন দুই বছর বৈধভাবে বসবাস করতে হত।

আবার যদি বাবা-মা দু’জনেই অবৈধভাবে পর্তুগালে বসবাস করে এবং সন্তান জন্ম দেয় তাহলে তার সন্তানও জন্মসূত্রে পর্তুগিজ নাগরিকত্ব প্রদানের সুপারিশ করা হয়। তার সাথে সন্তানের বাবা-মাকে ও সন্তানের মাধ্যমে বৈধতা দেওয়ার বিষয়ে প্রস্তাব দেওয়া হয়।

১৯৭৪ সাল থেকে ১৯৮১ সালের মধ্যে যে সকল শিশুর জন্ম হয়েছে পর্তুগালে তাদেরও নাগরিকত্ব প্রদানের বিষয়ে সুপারিশ করা হয়। এ ছাড়া যারা বৈধভাবে পাঁচ বছর নিয়মিত বসবাস করবে তারাও পর্তুগিজ নাগরিকত্ব আবেদন করতে পারবে যা আগে থেকেই কার্যকর ছিল।

এ বিষয়ে কথা হয় পর্তুগালের অভিবাসন বিষয়ক অ্যাডভোকেট রাকেলের সঙ্গে। তিনি বলেন, বিষয়টি একটি প্রস্তাব মাত্র। যার বেশ কয়েকটি ধাপ রয়েছে আইন আকারে পাস হতে। তবে তা আদো বিল আকারে পাস হয়ে বাস্তবায়ন হবে কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দিহান! কারণ পর্তুগালের অভিবাসন আইন ইতোমধ্যে অনেকটাই শিথিল এবং সরলীকরণ করা হয়েছে।

বিগত দুসপ্তাহে অনেকে পর্তুগিজ নাগরিকত্ব আবেদনের ক্ষেত্রে পর্তুগিজ ভাষা শিক্ষা সনদ এর বিষয়ে জানতে চেয়েছে যা আগের মতই কার্যকর। অর্থাৎ নাগরিকত্ব আবেদনে অবশ্যই পর্তুগিজ ভাষা সনদ লেভেল এ২ এখনো আবশ্যক।

আরেক আইনজীবী অ্যাডভোকেট নুনো পিন্টু সিলভা উল্লেখ করেন, নাগরিকত্ব আইনের বেশকিছু ধারা সংশোধনের জন্য সংসদের ছোট ছোট কয়েকটি দল উদ্যোগ নিয়েছে এবং তার প্রাথমিক আলাপ আলোচনা চলছে। তবে তা পাস হতে সংসদের বেশ কয়েকটি ধাপ পার হতে হবে। সে সমস্ত প্রক্রিয়া কবে নাগাদ শুরু বা শেষ হবে তা কেউ বলা সম্ভব নয়। আবার সংশোধনী সমূহ সংসদে সর্বসম্মতি ক্রমে পাস হবে তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই।

নাগরিকত্ব আবেদনের প্রক্রিয়া এবং শর্তাবলী আগের মতোই রয়েছে এবং নতুন কোনো ধারা বা আইন এখন পর্যন্ত কার্যকর হয়নি। পর্তুগালের বাংলাদেশ কমিউনিটির প্রবীণ ব্যক্তিত্ব, অভিবাসন কর্মী ও লিসবন সিটি কাউন্সিলর রানা তসলিম উদ্দিন বলেন, বিগত কয়েক দিনে অনলাইন কিছু পত্রিকায় এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় পর্তুগালের নাগরিকত্ব আইন সংশোধনের বিষয়ে কিছু সংবাদ নজরে আসে। যা অনেক ক্ষেত্রেই ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।

পর্তুগালের নাগরিকত্ব আবেদনের আইনটি আগের মতোই রয়েছে। তবে সংসদের ছোট একটি অংশ কিছু কিছু ধারার সংশোধন চেয়ে একটি প্রস্তাব পেশ করেছে। যেখানে বলা হয়েছে পাঁচ বছরের অধিক বৈধভাবে বসবাস করলে পর্তুগিজ ভাষা পর্যাপ্ত পরিমাণে না জানলেও চলবে কিন্তু বেসিক পর্তুগিজ অবশ্যই জানতে হবে এবং পর্তুগালের ইতিহাস এবং ভৌগলিক অবস্থান সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে। প্রস্তাবিত ধারা সমূহ ভোটাভোটির পরে সর্বসম্মতি ক্রমে পাস হলে তা বিল আকারে আসতে সময় সাপেক্ষ ব্যাপার।

প্রতিটি দেশ চায় তাদের ভাষা, সাংস্কৃতি এবং ইতিহাস ঐতিহ্য সবাই জানুক এবং তার জন্য তাদের বিশেষ বরাদ্দ বা প্রকল্প থাকে। এবং পর্তুগালও তার ব্যতিক্রম নয়। পর্তুগ্রিজ নাগরিকত্ব আবেদনের ক্ষেত্রে পর্তুগিজ ভাষা সনদ বাধ্যতামূলক এবং তা পরিবর্তনের তেমন কোনো সম্ভাবনা নেই।

সম্প্রতি গঠিত পর্তুগালের নতুন সরকারের অভিবাসন বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মরিয়ানা ভিয়েরা দা সিলভা বলেন, পর্তুগালে আসা এবং অবস্থানরত অভিবাসীদের বৈধতার বিষয়টি বর্তমান সরকারের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

শিশুদের অধিকার সম্পর্কিত কনভেনশনের ৩০ বছর এবং পর্তুগালে ইউনিসেফের ৪০ বছর পূর্তি উপলক্ষে লিসবনে একটি সম্মেলনে মন্ত্রী বলেন, পর্তুগালের অভিবাসীদের বৈধ ভিসা বা বৈধভাবে পর্তুগালে প্রবেশ এবং পর্তুগিজ ভাষা শেখা এই দুইটি মূল শর্তের উপর অগ্রাধিকার দিয়ে অভিবাসীদের বৈধকরণ প্রক্রিয়া সহজ করার বিষয়টি নিশ্চিত করবে বলে জানান।