সৌদি আরবে নির্যাতনের শিকার গৃহকর্মী সুমি আক্তারকে (২৬) উদ্ধার করা হয়েছে। সোমবার রাতে জেদ্দার দক্ষিণে নাজরান এলাকার কর্মস্থল থেকে তাকে উদ্ধার করে থানা হেফাজতে নিয়ে আসে স্থানীয় পুলিশ। সুমি আশুলিয়ার চারাবাগ এলাকার নুরুল ইসলামের স্ত্রী। বর্তমানে জেদ্দায় বাংলাদেশ কনস্যুলেটের তত্ত্বাবধানে সুমি ভালো আছেন বলে জানিয়েছেন স্বামী নুরুল ইসলাম।
মঙ্গলবার বিকেলে সুমি আক্তারের বিষয়ে খোঁজ নিতে আশুলিয়ার চারাবাগ এলাকায় গেলে একথা জানান তিনি। তিনি বলেন, সোমবার রাতে সুমির সঙ্গে কথা হয়েছে। সেখানকার স্থানীয় থানা থেকে পুলিশ গিয়ে সুমিকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে। বর্তমানে সে বাংলাদেশ দূতাবাসের তত্ত্বাবধানে রয়েছে এবং ভালো আছে। বাংলাদেশ দূতাবাসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে যত দ্রুত সম্ভব তাকে দেশে পাঠানো হবে।
সুমির স্বামী নুরুল ইসলাম বলেন, সুমির সঙ্গে তিন বছর আগে তার বিয়ে হয়। এর আগে তিনি আরও দুটি বিয়ে করেছেন। প্রথম স্ত্রী দুই ছেলে রেখে মারা গেছে কয়েক বছর আগে। বড় ছেলে রিফাত (৯) স্থানীয় চারাবাগ মডেল মাদরাসায় পড়ে এবং ছোট ছেলে সিফাত (৭) বাসায় থাকে।
তিনি জানান, প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুর পর তিনি দ্বিতীয় বিয়ে করেন। সে ঘরেও এক ছেলে হয়। কিন্তু দ্বিতীয় স্ত্রী আগের সন্তানদের দেখাশোনা না করায় পরে তিনি সুমিকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর আগের ঘরের দুই সন্তান নিয়ে সংসার ভালোই চলছিল। কিন্তু হঠাৎ করে সুমি অন্যের প্ররোচনায় পড়ে কিছু না জানিয়ে বিদেশে পাড়ি জমায়। আমার আগের ঘরের দুই ছেলে তার জন্য প্রায়ই কান্নাকাটি করে।
রিফাত ও সিফাত কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলে, ‘আপনারা আমার মাকে এনে দেন। আমরা আমাদের মাকে ফেরত চাই’।
প্রসঙ্গত গত কয়েকদিন আগে সৌদিতে নির্যাতনের শিকার বাংলাদেশি গৃহকর্মী সুমি আক্তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাকে দেশে ফিরিয়ে নেয়ার আকুতি জানান। ভিডিও কলে তিনি বলেন, ‘ওরা আমারে মাইরা ফালাইব, আমারে দেশে ফিরাইয়া নিয়া যান। আমি আমার সন্তান ও পরিবারের কাছে ফিরতে চাই। আমাকে পরিবারের কাছে নিয়ে যান। এখানে আমার ওপর অনেক নির্যাতন করা হচ্ছে। আর কিছুদিন থাকলে হয়তো মরেই যাব। প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সবার কাছে অনুরোধ আপনারা আমাকে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যান’।
সুমির আকুতির সেই ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর তার স্বামী নুরুল ইসলাম রাজধানীর পল্টন থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।
এর আগে চলতি বছরের জানুয়ারিতে গৃহকর্মীর ট্রেনিং শেষ করেন সুমি। পরে দালালদের দেখানো লোভ আর বিদেশে গিয়ে ভালো টাকা আয়ের আশ্বাসে গত ৩০ মে ‘রূপসী বাংলা ওভারসিজ’ নামে একটি এজেন্সির মাধ্যমে সৌদি আরবে পাড়ি জমান তিনি। কিন্তু দালালরা বিদেশে পাঠানোর কথা বলে তাকে বিক্রি করে দেয়। সৌদি যাওয়ার সপ্তাহ খানেক পর শুরু হয় মারধর, যৌন হয়রানিসহ নানা নির্যাতন।
এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেদ্দায় বাংলাদেশ কনস্যুলেটের এক কর্মকর্তা জানান, সুমিকে থানায় নিয়ে আসা হলেও তার এখানকার নিয়োগকর্তা (কফিল) তাকে ছাড়তে চাইছেন না।
তিনি সুমিকে এখানে রাখতে চান। তাকে ছাড়তে হলে রূপসী বাংলা ওভারসিজের কাছ থেকে সৌদির কফিলকে টাকা আদায় করে দিতে হবে। কফিলের দাবি, সুমিকে সৌদিতে নিতে তার প্রায় তিন লাখ টাকা খরচ হয়েছে, যা এখনও সেবায় (কাজে) শোধ হয়নি।
সৌজন্যে- জাগো নিউজ