ভারত সফরের ঠিক আগ মুহূর্তে ক্রিকেটারদের আন্দোলন, একাধিক ক্রিকেটারের সফরসঙ্গী হতে অনিশ্চয়তা, বিসিবি থেকে সাকিব আল হাসানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ; এসব বিষয় নিয়ে গত কয়েকদিন ধরেই উত্তাল ক্রিকেটপাড়া। এই সফরে সাকিবের সঙ্গী হওয়া না হওয়া নিয়ে যখন আলোচনা তুঙ্গে যখন দেশের ক্রিকেট ভক্তদের জন্য এসেছে নতুন দুঃসংবাদ।
বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন ইতিমধ্যে একাধিক ব্রিফিং ও সাক্ষাৎকারে ৩০ অক্টোবর আইসিসির একটি রিপোর্ট পাওয়ার কথা বলেছেন। গত ২২ অক্টোবর মঙ্গলবার মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে সংবাদ সম্মেলনে ম্যাচ ফিক্সিংয়ের বিষয়েও ইঙ্গিত দেন তিনি। সাকিব যে ৩০ অক্টোবর দলের সঙ্গে ভারত যেতে পারছেন না, সেটিও এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন বিসিবি সভাপতি। ভারত সফরে নতুন অধিনায়ক পাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তার কথাও উল্লেখ করেছেন পাপন। সংশ্নিষ্টরা জানিয়েছেন, এত কিছুই ঘটেছে সাকিবের সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞাকে সামনে রেখে।
আইসিসি ইতিমধ্যে সাকিবের ব্যাপারে বিসিবিকে বিস্তারিত জানিয়েছে। তাকে জাতীয় দলের সঙ্গে অনুশীলন না করার নির্দেশনাও দিয়েছে আইসিসি। এ কারণে অসুস্থ বলে জাতীয় দলের অনুশীলনে যোগ দিচ্ছেন না সাকিব। গতকাল সোমবার বিসিবির একাধিক পরিচালকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাকিব পরবর্তী সময়ে আকসুকে সহায়তা করায় একটু নমনীয় তারা। শাস্তি ১৮ মাস নির্ধারণ করা হলেও সাকিব আপিল করলে সেটা কমিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে। বিসিবির সহযোগিতা চাওয়ার পাশাপাশি সাকিব আইসিসির কাছেও ক্ষমা চেয়ে শাস্তি মওকুফের আবদেন করবেন। আইসিসি দুর্নীতি দমন বিভাগের নিয়ম ও শৃঙ্খলা মেনে চললে এই শাস্তি ছয় মাসে নেমে আসতে পারে। এটাই এক্ষেত্রে সর্বনিম্ন শাস্তি।
বিসিবি’র একটি সূত্র জানিয়েছে, দুই বছর আগে একটি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচের আগে এক ক্রিকেট জুয়াড়ির কাছ থেকে অনৈতিক প্রস্তাব পেয়েছিলেন সাকিব আল হাসান। সেটা প্রত্যাখ্যান করলেও নিয়মানুযায়ী আইসিসির দুর্নীতি দমন সংস্থা-আকসুকে জানাননি সাকিব। তবে ওই জুয়াড়ির কল ট্র্যাকিং করে বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে কিছুদিন আগে সাকিব আল হাসানের সঙ্গে কথা বলে আকসুর প্রতিনিধি দল। সেখানে সাকিবও বিষয়টি স্বীকার করেন।
ওই সূত্র সংবাদমাধ্যমটিকে বলেছে, সম্ভবত আইসিসির দুর্নীতি দমন সংস্থার রায়ে ১৮ মাসের জন্য নিষিদ্ধ হতে যাচ্ছেন সাকিব। তার বিরুদ্ধে জুয়াড়ির কাছ থেকে ম্যাচ পাতানোর অভিযোগ পেয়েও নিশ্চুপ থেকেছেন তিনি।
তবে আইসিসির কোড অব কন্ডাক্টে বলা আছে, বাজিকরদের কাছ থেকে ম্যাচ বা স্পট ফিক্সিংয়ের অভিযোগ পেলে সংশ্লিষ্ট বোর্ডকে জানাতে হবে। না হয় আইসিসির দুর্নীতি দমন সংস্থা- আকসুকে অবহিত করতে হবে। সে খবর নিজে লুকিয়ে রাখলে সেটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে গণ্য হবে। সাকিব তার কোনোটাই করেননি।
আজই নাকি সেই তথ্য প্রকাশ পাচ্ছে। আর এমনটা হলে সাকিব শাস্তি পাচ্ছেন এবং ভারত সফরে আর যেতেই পারছেন না।
একাধিক সূত্র জানিয়েছে, দেশের ভেতরের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও ক্রিকেটারদের কল রেকর্ড থেকে তথ্য সংগ্রহ করছে। ভারত সফর বানচালের যে ইস্যু সামনে এসেছে, সেটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ক্রিকেটারদের ধর্মঘট ও আন্দোলনের পেছনে লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জের মালিক লুৎফর রহমান বাদলের ইন্ধন ও সম্পৃক্ততার কথা শোনা যাচ্ছে। দুর্নীতির অভিযোগ মাথায় নিয়ে বাদল ইংল্যান্ডে আছেন। সন্দেহজনক সবকিছুই খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান বিসিবির এক প্রভাবশালী পরিচালক। তবে পরিস্থিতি যা-ই হোক, বাংলাদেশ দলকে সাকিবকে ছাড়াই আপাতত যেতে হবে ভারত সফরে।