বাংলাদেশী একটি জাতীয় দৈনিকের রম্য ম্যাগাজিনে ভারতীয় ক্রিকেটারদের নিয়ে ব্যাঙ্গচিত্র প্রকাশ করায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে ভারতের বেশ কয়েকটি গণমাধ্যম। ভারতের জাতীয় দৈনিক টাইমস অব ইন্ডিয়া, কলকাতার দৈনিক এই সময়সহ বেশ কিছু গণমাধ্যমে ব্যাঙ্গচিত্র নিয়ে সমালোচনা করা হয়েছে।
দৈনিক প্রথম আলোর রম্য ম্যাগাজিন রস+আলো-তে বাংলাদেশী ক্রিকেটার মুস্তাফিজের হাতে ভারতীয় ক্রিকেটারদের নাজেহালের চিত্র তুলে ধরা হয় ব্যঙ্গচিত্রের মাধ্যমে। কিন্তু বিষয়টি স্বাভাবিকভাবে নেয়নি ভারতীয় গণমাধ্যম। ব্যঙ্গচিত্রটি ফেসবুকে শেয়ারেরও সমালোচনা করা হয়েছে পত্রিকাগুলির প্রতিবেদনে।
“বাংলাদেশ নিউজপেপার মকস ইন্ডিয়ান টিম” শিরোনামের রিপোর্টে টাইমস অব ইন্ডিয়া লিখেছে, “ভারতীয় ক্রিকেটারদের প্রতি চরম অবজ্ঞা দেখিয়ে একটি ভুয়া “কাটার”-এর বিজ্ঞাপনচিত্র ছেপেছে পত্রিকাটি যেখানে সাত ভারতীয় ক্রিকেটারকে দেখানে হয়েছে মাথা অর্ধেক কামানো অবস্থায়।”
দৈনিক এই সময় তাদের “‘অভব্য’ প্রতিবেশির হাতে ‘ন্যাড়া’ ভারত” শিরোনামের প্রতিবেদনে লিখেছে:
‘ভারতের বিরুদ্ধে সিরিজ জিতে বোধহয় মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে বাংলাদেশের’। একটি ছবি দেখে সহাস্য মন্তব্য এক পথচারীর। না, ঠিক সহাস্য ছিল না। শত হলেও ভারতীয় দলকে নিয়ে এমন হাসি-তামাশ এর আগে কোনও দেশ করছে বলে তো মনে পড়ছে না। তবে ‘অভব্যতার’ নজির গড়ে বাংলাদেশের এক প্রথম শ্রেণির দৈনিক অধিনায়ক ধোনি-সহ আরও ৬ ক্রিকেটারকে অর্ধেক ন্যাড়া অবস্থায় তাদের কভার পেজে ছাপল। যেখানে ‘নাপিত’-এর ভূমিকায় অবতীর্ণ হলেন বাংলাদেশি বোলার মুস্তাফিজুর রহমান।
ছবিটিতে দেখা যাচ্ছে ভারতীয় অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি-সহ আরও ৬ ক্রিকেটার, বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মা, শিখর ধাওয়ান, অজিঙ্কে রাহানে, রবীন্দ্র জাডেজা এবং রবিচন্দ্রন অশ্বিন একটি ব্যানার হাতে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। তাতে লেখা, ‘আমরা ব্যবহার করেছি, আপনিও করুন!’ এর ওপরে বাংলাদেশি বোলার মুস্তাফিজুর রহমান একটি কাটার হাতে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। সেখানে লেখা রয়েছে, ‘এখানে বাংলাদেশে প্রস্তুতকৃত মুস্তাফিজ কাটার পাওয়া যায়’। তার নীচে ঠিকানা দেওয়া রয়েছে, স্টেডিয়াম মার্কেট মিরপুর, ঢাকা। মানে ঢাকার স্টেডিয়ামকে সেলুন হিসাবে দেখিয়ে মুস্তাফিজকে ‘নাপিত’ও বানানো হল। সেই সেলুনে ‘ন্যাড়া’ করা হল ভারতীয় খেলোয়াড়দের।
এটাকে ঠিক কী বলা যায় জানা নেই। অসভ্যতা, অভব্যতা নাকি অনাস্বাদিত কোনও বস্তুর স্বাদে মাথা খারাপ হয়ে যাওয়ার উদাহরণ। কারণটা যাই হোক, তাতে অন্য দেশের আন্তর্জাতিক খেলোয়াড়দের নিয়ে মজা করার এমন নজির বিশ্ব ক্রিকেটে মিলবে কিনা সন্দেহ রয়েছে। ঘটনা দু’ দেশের সমর্থদের মধ্যে যে যথেষ্ট উত্তেজনা তৈরি করতে পারে তা নিয়েও ভাবনা-চিন্তার অবকাশ দেখা গেল না এমন ‘ন্যক্কারজনক’ কাজে।
এবিপি আনন্দ “বাংলাদেশের সংবাদপত্রে ভারতীয় প্লেয়ারদের নিয়ে ব্যঙ্গচিত্র লজ্জাজনক” শিরোনামে প্রতিবেদন ছেপেছে। রিপোর্টটি তুলে ধরা হলো:
সম্প্রতি শেষ হওয়া ভারত-বাংলাদেশ একদিনের সিরিজে বাংলাদেশ ভারতকে তিনটি ম্যাচের মধ্যে দুটিতে হারিয়ে সিরিজ জিতে নেয়। বাংলাদেশের এই ঐতিহাসিক জয় ভারতের জন্য নিঃসন্দেহে লজ্জাজনক। কিন্তু তার চেয়েও লজ্জাজনক কাজ করেছে বাংলাদেশের এক শীর্ষ স্থানীয় সংবাদপত্র প্রথম আলো। বাংলাদেশ যথেষ্ট ভাল খেলে জিতেছে, কিন্তু সেই খেলোয়াড়সুলভ মনোভাব দেখাতে পারেনি বাংলাদেশের সংবাদপত্র প্রথম আলো।
প্রথম আলো তাদের ২৯ জুনের সাপ্তাহিক ক্রোড়পত্র রস আলোতে একটি বিজ্ঞাপন ছেপেছে, যেখানে দেখা যাচ্ছে টিম ইন্ডিয়ার সমস্ত প্লেয়ার রাহানে, রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলি, রবীন্দ্র জাদেজা, ধোনি, শিখর ধবন, রবীচন্দ্র অশ্বীনকে অর্ধেক নেড়া অবস্থায়। তার ওপরে লেখা, একটি দোকানের নাম এবং ব্যঙ্গচিত্রে ভারতীয় প্লেয়াররা বলছে আমরা মুর্তাফিজ কাটার ব্যবহার করে এমন চেহারা পেয়েছি, আপনারাও ব্যবহার করুন। এক্ষেত্রে বাংলাদেশি প্লেয়ার মুস্তাফিজুর রহমানের বিখ্যাত স্ট্রোক ‘অফকাটার’-এর কথাই বলা হয়েছে, যা ভারতীয়দের বাংলাদেশে সিরিজ হারের অন্যতম কারণ। এমনকি দোকানের ঠিকানায় লেখা রয়েছে মুর্তাফিজ কাটার পাওয়া যায় স্টেডিয়াম মার্কেট, মীরপুর, ঢাকায়।