চলমান প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার প্রশ্নপ্রত্র ফেসবুকে ফাঁস হওয়ার প্রমাণ মিলেছে। আজ মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত ‘বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়’ পরীক্ষার প্রশ্ন এবং উত্তর গতকালই ফেসবুকের বিভিন্ন পেজে পাওয়া গেছে। পরবর্তী বিজ্ঞান পরীক্ষার প্রশ্নের জন্যও ফেসবুকের মাধ্যমে বিভিন্ন লিংকে চলছে তোলপাড়।
তবে সরকারের পক্ষ থেকে বারবার বলা হচ্ছে, প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসের ব্যাপারে তাদের কাছে কোনো তথ্য নেই।
মঙ্গলবার পরীক্ষার পর কয়েকজন শিক্ষার্থীর কাছে থেকে প্রশ্ন নিয়ে দেখা গেছে, গতকাল ফেসবুকে প্রকাশিত হওয়া প্রশ্নের সঙ্গে রচনামূলক ও সংক্ষিপ্ত সব প্রশ্নের হুবহু মিল রয়েছে।
সোমবার রাতে ফেসবুক অনুসন্ধান করে PSC_ JSC_ JDC_ SSC_ HSC_ TECH Exam Suggetion & Question Bank Help line -এই আইডিতে; https://www.facebook.com/allexamsuggetion?fref=nf (১ নং লিংক) ‘বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়’ পরীক্ষার প্রশ্ন এবং উত্তর পাওয়া যায়। পেজটিতে এই প্রশ্ন ১০০% কমন পড়বে বলে নিশ্চয়তা দেওয়া হয়। একই প্রশ্ন পাওয়া যায় Md Ahosan Habib নামের ফেসবুক আইডিতেও; https://www.facebook.com/rufitha.rume/posts/1578518855714234?fref=nf&pnref=story– (২ নং লিংক)।
আজ দুপুর দেড়টার দিকে ১নং লিংকে আবার পোস্ট দেওয়া হয়েছে, “আমাদের দেওয়া সমাজ (বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়) প্রশ্ন কমন পড়েছে। আজ আবার বিঙ্গান প্রশ্ন দেব। সাথেই থাকুন।” পোস্টটি শেয়ার হয়েছে ৬১ বার; লাইক পড়েছে ২,৮১৫টি।
এদিন বিকাল ৩টা ৫২ মিনিটি দ্বিতীয় লিংকে গিয়ে দেখা যায়, Md Ahosan Habib তার পোস্টে লিখেছেন, “শিক্ষামন্ত্রী শত চেষ্টার পরও ফাস করলাম psc পরীক্ষার এর প্রশ্ন ১ সেট। যাদের লাগবে তারা মাত্র ২টা কাজ করুন আর এই কাজ না করলে আমরা দুঃখীত। নিচের নিয়মগুলো অনুসরন করুনঃ প্রথমে আমাকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাও এবং আমার পোস্টে লাইক দিয়ে একটিভ থাকুন এটা অনুসরন করলে আপনি অবশ্যই আমার কাছ থেকে প্রতিদিন ১০০% কমোন প্রশ্ন পাবেন ইনশাল্লাহ।”
এর আগে অনেক অভিভাবক অভিযোগ করে বলেন, ইংরেজি ও বাংলা পরীক্ষাও একইভাবে ফাঁস হয়েছে। অনেক খুদে শিক্ষার্থী ফেসবুকের মাধ্যমে পরীক্ষার আগেই প্রশ্ন পেয়ে যাচ্চ্ছে।
এ ব্যাপারে পিএসসি পরীক্ষার্থী নাহিদের বাবা গোলাম হোসেন বলেন, দুর্ভাগ্য ছাড়া কিছু নয়। পরীক্ষার আগের দিন ছেলে-মেয়েরা পড়াশোনার পরিবর্তে প্রশ্ন পাওয়ার আশায় বসে থাকছে। এতে করে প্রশ্নফাঁসের মাধ্যেমে বাচ্চাদের জীবন গোড়াতেই ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।
সাদিয়া জাহান নামের এক অভিভাবক তীব্র ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, ফলাফলের রেকর্ড দেখাতে সরকার নিজেই হয়তো এই প্রশ্ন ফাঁস করছে। কেননা প্রশ্ন ফাঁসে জড়িত অভিযোগে গ্রেপ্তারদের মধ্যে সরকারি স্কুলের শিক্ষকরাও রয়েছেন।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান জানান, প্রাথমিকে প্রশ্ন ফাঁসের ব্যাপারে সরকারের কাছে কোনো তথ্য নেই। মঙ্গলবার বিকালের দিকে ইনডিপেন্ডেন্ট টিভির স্ক্রলে এ খবর দেখা গেছে।
এদিকে সোমবার অনুষ্ঠিত বাংলা পরীক্ষার প্রশ্ন পরীক্ষা শুরুর আগেই বগুড়া, দিনাজপুরসহ কয়েকটি এলাকায় ফাঁস হয়, যা মূল প্রশ্নের সঙ্গে হুবহু মিলে গেছে বলে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেছে। টাঙ্গাইলের বাসাইলে হাতে লেখা প্রশ্নপত্র শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিলির উদ্দেশে ফটোকপি করার দায়ে এক কিন্ডারগার্টেনের মালিক ও এক ফটোকপি ব্যবসায়ীকে কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
গত রোববার এই পরীক্ষা শুরুর দিনেও প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ করেছিলেন একাধিক অভিভাবক। তবে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আলমগীর এই অভিযোগ অস্বীকার করে সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা কোনো অভিযোগ পাইনি। তবে সাংবাদিকেরা পরীক্ষার পর প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগের কথা জানিয়েছেন। পরীক্ষার পর বললে তো আর লাভ নেই।”’
প্রসঙ্গত, বগুড়ায় কোচিং সেন্টারে অভিযান চালিয়ে পরীক্ষার আগের দিন রোববার শিক্ষকদের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া সমাপনী পরীক্ষার হাতে লেখা প্রশ্নের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বাংলার প্রশ্নপত্রের হুবহু মিল পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় সরকারি স্কুলের ৪ শিক্ষককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
উল্লেখ্য গতবারও এই পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছিল, যা তদন্তে প্রমাণিত হয়। সেবার প্রাথমিক সমাপনীতে ২৯ লাখ ৫০ হাজার ১৯৩ জন শিক্ষার্থী অংশ নেয়। এর মধ্যে পাস করে ২৭ লাখ ৪৫ হাজার শিক্ষার্থী (মোট শিক্ষার্থীর ৯৮.৫৮ শতাংশ)।জিপিএ-৫ পায় প্রায় আড়াই লাখ শিক্ষার্থী।
এ বছর প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর ২৭ লাখ ৮৮ হাজার ৫৪৪ শিক্ষার্থী এবং মাদ্রাসার ৩ লাখ ৫ হাজার ৭২১ শিক্ষার্থী সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে।
তথ্য সুত্রঃ অর্থসূচক